বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিশিষ্টজন ও সর্বস্তরের মানুষ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজার পর আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে তাঁকে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন মেধাবী ছাত্র ও শিক্ষক। তাঁর বাবাও শিক্ষক ছিলেন। বাবার আদর্শ অনুসরণ করে তিনি আদর্শ শিক্ষক হয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সাহিত্য, শিল্পকলার সমালোচনা, নন্দনতত্ত্ব বিষয়ে উঁচু স্তরের লেখক ছিলেন। তিনি কখনো বিষণ্ন ও হতাশ হতেন না। বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তাঁর প্রস্থানে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুলার রোডে পাশাপাশি বাড়িতে অনেক বছর থেকেছি। তিনি ছিলেন খুবই জনপ্রিয় শিক্ষক। সেই জনপ্রিয়তা কত ব্যাপক, তা আজ এই বৃষ্টি উপেক্ষা করে এত মানুষের সমাগম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তিনি নির্লোভ ও বিনয়ী ছিলেন। তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল। নতুন লেখকদের উৎসাহ দিতেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা দুজনেই সিলেটের মানুষ। আমরা পরিবেশ ইস্যুতে অনেক সময় একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি ছিলেন গভীর প্রজ্ঞাবান ও নিঃস্বার্থ মানুষ।’ তিনি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
অপরাজেয় বাংলার সামনে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনার পর সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমাদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বোন সাহিদা সাত্তার বলেন, ‘আমার ভাই যে কতটা জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন…গত এক সপ্তাহে হাসপাতাল তাঁর ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ও আজ এখানে বৃষ্টির মধ্যেও এত মানুষের সমাগমে আমরা অভিভূত হয়েছি।’ তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আজ ভোরে দেশে ফিরেছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে আরও বক্তব্য দেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, গীতিকবি, শহীদুল্লাহ ফারায়েজি।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, শহিদুল আলমের নেতৃত্বে দৃক পিকচার লাইব্রেরি, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের পক্ষে মফিদুল হক, নাট্যজন ম হামিদ, ব্র্যাকের আসিফ সালেহ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নির্বাহী সম্পাদক, কবি ও সাংবাদিক সাজ্জাদ শরিফ, প্রথম আলোর উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, বাংলা একাডেমির পক্ষে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, পরম কথার পক্ষে কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান প্রমুখ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। পরে কালি ও কলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ, ছায়ানট, ব্র্যাক পরিবার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস, ইউ ল্যাবের উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ জাসদ, আর্কাইভ অধিদপ্তর, সিটি ব্যাংক, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাসদ মার্ক্সবাদী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কথাপ্রকাশ, প্রাচ্যনাট্য, , শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী, শান্ত–মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, অ্যাপল্যাব, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, প্রথম আলো, নিজেরা করি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট, অন্য প্রকাশ, হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, যুব ইউনিয়ন, শিল্পকলা একাডেমি, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।







