৭৭ বছর পর হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সন্ধান, সন্দ্বীপে এলেন মার্কিন নাগরিক

১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় প্রাণ বাঁচাতে সন্তান নারায়ণ মিত্র নান্টুকে নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন সন্দ্বীপের বাসিন্দা ডা. প্রিয়লাল মিত্র। মাকে ফেলে যাওয়ার সময় ৫ বছরের নান্টু কেঁদেছিলেন, স্বপ্ন ছিল আবার আসবেন মায়ের কাছে।

সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, তবে তার আগেই মৃত্যু হয় বাবা-মায়ের। ৭৭ বছর পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মস্থান সন্দ্বীপ এসে পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সাক্ষাৎ পেয়েছেন নারায়ণ মিত্র নান্টু। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী শ্রাবণী মিত্র।

নারায়ণ মিত্র পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বসবাস নিউইয়র্কের আলবেনি শহরে। ভারত থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন আমেরিকায়। পরে সেখানেই থিতু হন। তাঁকে সন্দ্বীপের বংশধরদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সেতুবন্ধন তৈরি করে দেন আমেরিকা প্রবাসী আতাউর রহমান বাবুল। জন্মস্থানে এসে পরিচিত হন স্থানীয় শিক্ষক শামসুল আজম মুন্নার সঙ্গে।

আরও পড়ুন:  নতুন বছরের শুরুতে শৈত্যপ্রবাহের আভাস

মুন্না নারায়ণ মিত্র নান্টুর সঙ্গে আলাপে জেনে নেন কিছু তথ্য। কার্গিল হাইস্কুলের সামনে ডা.প্রিয়লাল মিত্রের ওষুধের দোকান ছিল, বাবার নামে ছিল স্কুল। প্রিয়লাল মিত্রের ভাইয়ের নাম ছিল বকুল মিত্র। ফেসবুকে এ নিয়ে দেন স্ট্যাটাস। এরপর তাদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ভূমি কর্মকর্তার কাছে সহায়তা চান। কিন্তু পুরনো দলিল ঘেঁটেও মিলেনি হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সন্ধান।

এরই মধ্যে ফেসবুকে বিভিন্নজনের মন্তব্যের সূত্র ধরে চলে অনুসন্ধান। অবশেষে রহমতপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ড মহাজনপাড়ায় মিত্র পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সন্ধান মিলে। উভয়পক্ষের আলাপচারিতায় নিশ্চিত হওয়া যায়, তারা সবাই একই পরিবারের।

নারায়ণ মিত্র’র স্ত্রী শ্রাবণী মিত্র বলেন, সন্দ্বীপে এসে ঘুরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। তবে স্বামীর বংশধরদের খুঁজে পাবো-সেটা ছিল ধারণার বাইরে।

আরও পড়ুন:  নারায়ণগঞ্জে শিশুসহ ৩ জনের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার

আপনজনদের খুঁজে পেয়ে খুশি ৮২ বছরের নারায়ণ মিত্র। তিনি বলেন, ‘শৈশবের স্মৃতি বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। মৃত্যুর আগে একবারের জন্য হলেও সন্দ্বীপ আসার ইচ্ছে ছিল। আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। জীবন সায়াহ্নে সন্দ্বীপের মাটি ছুঁতে পেরেছি, এখন মরেও শান্তি পাবো’।

ছয় যুগ আগে মাকে ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় কেঁদেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার নারায়ণ মিত্র, সেদিন জন্মভূমিতে এসে আবারও কাঁদলেন তিনি। কাঁদালেন সবাইকে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার আগে বললেন, ‘বেঁচে থাকলে আবারও আসবো সন্দ্বীপে। কারণ এখানেই যে আমার শিকড়’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *