শেখ হাসিনার সাজা ও প্রত্যর্পণ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশ্লেষণ

গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের খবরটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে বিবিসি ও আল জাজিরা রায় পরবর্তী সময়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কিত বিশ্লেষণও প্রকাশ করেছে।

মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস রায় ঘোষণা নিয়ে শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশ কোর্ট সেন্টেন্সেস ফরমার লিডার শেখ হাসিনা টু ডেথ’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে তাঁর সাজা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়টি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি। যা বিচারের মাধ্যমে পূরণ হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা যেকোনো নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারত তাঁকে প্রত্যর্পণ করবে- এটি প্রায় অসম্ভব।

বিবিসি-আল জাজিরার বিশ্লেষণ

বিবিসি তাদের ওয়েবসাইটের লাইভ ফিডে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। যেটির শিরোনাম ‘হোয়াই দিস ভার্ডিক্ট পুটস ইন্ডিয়া ইন আ ট্রিকি সিচুয়েশন’। এটি লিখেছেন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক প্রতিবেদক অন্বরাসন এথিরাজন। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার দোষী সাব্যস্ত হওয়াটা ভারতের জন্য জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই রায়ের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবারও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে অনুরোধ পাঠাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্ব নেতৃত্বের প্রশংসা ইউএই মন্ত্রীর

বিশ্লেষণে আরও লেখা হয়েছে, ঢাকা এর আগেও প্রত্যর্পণ চেয়েছিল। কিন্তু ভারত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তিও আছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে- অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হলে ভারত অনুরোধ অস্বীকারের পূর্ণ আইনি অধিকার রাখে।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আওয়ামী লীগ নেত্রী দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ভারতের রাজনৈতিক পরিসরেও তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে স্পষ্ট অনীহা আছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত এখন এক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে আছে। অন্বরাসন এথিরাজন লিখেছেন, প্রত্যর্পণ অনুরোধ নাকচ করলে তা ঢাকার কাছে বিরূপ কূটনৈতিক সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও চাপের মুখে ফেলবে। আবার অনুরোধ মেনে নেওয়ার মানে হলো; দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রকে উপেক্ষা করা। ফলে, ভারতকে এখন খুবই সংবেদনশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ পথে হাঁটতে হবে।

আরও পড়ুন:  বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিলেন শেখ হাসিনা

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষণের শিরোনাম ‘ভার্ডিক্ট মে ওপেন ডোর টু ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন’। এতে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক স্বাধীন গবেষক আব্বাস ফাইজ বলেছেন, আগামী বছর নির্বাচন। এর আগে ‘জনমতের চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে’ এমন একটি বার্তা দিতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা দেখাতে চাচ্ছে, তাদের তত্ত্বাবধানে স্বচ্ছ ও উন্নত বিচার প্রক্রিয়া সম্ভব।

আব্বাস ফাইজ আরও বলেন, এর পরিণতি কী হবে তা এখনই বলা কঠিন। বিশেষ করে এই রায় ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ককে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা আছে। তবে এই রায়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- এটি জাতীয় পুনর্মিলন প্রক্রিয়ার দরজা খুলে দিচ্ছে।

ভারতীয় ও অন্যান্য গণমাধ্যমের খবর

‘ক্রাইমস এগেনস্ট হিউম্যানিটি: বাংলাদেশ ওস্টেড পিএম শেখ হাসিনা সেন্টেন্সড টু ডেথ; কি টেকঅ্যাওয়েজ ফ্রম ভার্ডিক্ট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। শেখ হাসিনার উদ্ধৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘একটি সাজানো ট্রাইব্যুনাল আমার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। যা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছে অনির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেটহীন সরকার।’

আরও পড়ুন:  ঢাবির একাডেমিক-প্রশাসনিক ভবনে তালা

রায় নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি শিরোনাম করেছে, ‘শেখ হাসিনা গেটস ডেথ পেনাল্টি, ঢাকা কোর্ট সাইটস ক্রাইম এগেনস্ট হিউম্যানিটি’। এতে বলা হয়েছে, আদালত তিনটি অভিযোগে হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। মাসব্যাপী বিচার শেষে আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়ার জন্য দোষী।

রায় নিয়ে আরও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন, চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মিডল ইস্ট আই এবং বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *