মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এর আগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে। রায় ঘোষণার সময় জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াও জুলাই আগস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:  বিএনপি নেতারা কেন স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পোড়াচ্ছেন না প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী

রায়ে আরও বলা হয়, ‘আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই মত দিচ্ছি যে, তাঁরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে ও নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করে যে ঘৃণিত অপরাধ করেছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।’

এই মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতে অবস্থান করছেন। গ্রেপ্তার অন্য আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদিন ট্রাইব্যুনালে একমাত্র আসামি মামুন উপস্থিত ছিলেন।

গতবছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই প্রথম কোনো মামলার বিচারের রায় হলো। গত ১০ জুলাই সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবিলিটিসহ পাঁচ ধরনের সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এই প্রথম আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ২ জুলাই আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন একই ট্রাইব্যুনাল।

আরও পড়ুন:  শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের। অভ্যুত্থানের সময় গত বছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁর সরকারের কঠোর দমননীতিতে বহু মানুষ হতাহত হয়। এর মধ্যে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার উসকানি, প্ররোচণা ও নির্দেশ, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে তিন আসামির বিরুদ্ধে।

অভিযোগের পক্ষে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও টেপ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ দাখিল করে প্রসিকিউশন। গত ১ জুন প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *