ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, শরণার্থী নীতিতে বড় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছে তারা। নতুন নিয়মে কেউ যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পেলেও স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ছোট নৌকাযোগে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ এবং আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন কমাতেই সরকার শরণার্থী নীতিতে এ বড় সংস্কার আনতে চাইছে। যা আধুনিক সময়ে দেশটির শরণার্থী নীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে।
সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ এ সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা দেবেন।
লেবার সরকার গত কয়েক মাস ধরে অভিবাসন নীতি কঠোর করছে, বিশেষত ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় অবৈধভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে। কারণ অভিবাসন ইস্যুতে ডানপন্থি জনতোষণবাদী রিফর্ম ইউকে পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং তারা রাজনৈতিক আলোচনার এজেন্ডা নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে।
এই অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার বলছে, তারা ডেনমার্কের মডেল থেকে অনুপ্রেরণা নিচ্ছে—যা ইউরোপের সবচেয়ে কঠোর নীতিগুলোর একটি। একইসঙ্গে এই নীতিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাড়তে থাকা অভিবাসনবিরোধী মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরণের বিধিনিষেধের সমালোচনা করে আসছে।
অস্থায়ী মর্যাদা, নিয়মিত পর্যালোচনার আওতায়
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, নির্দিষ্ট কিছু আশ্রয়প্রার্থীর জন্য আইনি সহায়তা—যেমন আবাসনের সুযোগ ও সাপ্তাহিক ভাতা—প্রত্যাহার করা হবে।
দেশটির বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ, তাঁর মন্ত্রণালয় জানায়, এই পদক্ষেপ সেইসব আশ্রয়প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে—যারা কাজ করতে সক্ষম হয়েও কাজ করে না এবং যারা আইন ভঙ্গ করে। করদাতাদের অর্থে সহায়তা দেওয়া হবে তাঁদেরকেই—যারা ব্রিটিশ অর্থনীতি ও স্থানীয় সমাজে অবদান রাখছেন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, শরণার্থীদের সুরক্ষা এখন থেকে ”অস্থায়ী, নিয়মিত পর্যালোচনাধীন এবং বাতিলযোগ্য” হবে, যদি তাঁদের নিজ দেশ ”নিরাপদ” হিসেবে বিবেচিত হয়।
শাবানা মাহমুদ স্কাই নিউজকে বলেন, ”ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ব্যবস্থা অনেক উদার। পাঁচ বছর পর এদেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি মেলে—আমরা তা পরিবর্তন করছি।”
তিনি বলেন, নতুন ব্যবস্থায় প্রতি দুই বছর ছয় মাস পর শরণার্থীর মর্যাদা পর্যালোচনা করা হবে—এবং ”এই দেশে তাঁদের স্থায়ী বসবাসের পথ হবে ২০ বছরের দীর্ঘ প্রক্রিয়া”।
মাহমুদ আরও জানান, আগামীকাল সোমবার তিনি অভিবাসননীতির পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন, যার মধ্যে থাকবে ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৮–এর বিষয়ে ঘোষণা।
যুক্তরাজ্যের সরকার বলছে, তারা ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনে (ইসিএইচআর) থাকতে চায়, তবে অনুচ্ছেদ ৮ -এ পারিবারিক জীবনের অধিকার সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা রয়েছে, তা পাল্টাতে চায়।
মাহমুদ বলেন, এটি ”এমনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা অভিবাসন নিয়ম অনুযায়ী যাদের দেশে থাকার অধিকার নেই—তাদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
এদিকে সরকারের এই কঠোর নীতি দেশটিতে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। ১০০টিরও বেশি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা মাহমুদকে চিঠি লিখে অভিবাসীদের দোষারোপ বন্ধ করতে এবং ”ক্ষতিকর, প্রদর্শনমূলক নীতি” বাদ দেওয়ার আহ্বান জানায়। সংগঠনগুলোর মতে, এসব পদক্ষেপ সমাজে বর্ণবাদ ও সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।
বেশকিছু জরিপ বলছে, অভিবাসন এখন অর্থনীতির চেয়েও ব্রিটিশ ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। গত গ্রীষ্মে করদাতার অর্থে হোটেলে রাখা আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।
২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া বছরে দেশটিতে আশ্রয়লাভের আবেদন করেছে ১,০৯,৩৪৩ জন—যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি এবং ২০০২ সালের রেকর্ড ১,০৩,০৮১–এরও উপরে।
মাহমুদ বলেন, সরকার আরও ”নিরাপদ ও বৈধ” পথে আশ্রয়ের সুযোগ বাড়ানোর কথা ভাবছে।







