ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে আট হাজার ২২৬টির অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০ হাজার ৪৩৭টি। এ হিসাবে মোট ভোটকেন্দ্রের দুই-তৃতীয়াংশ তথা ৬৭ শতাংশই ঝুকিঁপূর্ণ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এখনই ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নির্বাচনকালে অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্প্রতি ইসিতে পাঠানো পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। নির্বাচন সামনে রেখে গত অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে ইসিতে অনুষ্ঠিত সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে এসবি এই প্রতিবেদন তুলে ধরে। এতে ঝুঁকি মোকবিলার কয়েকটি সুপারিশও করা হয়।
একই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) পক্ষ থেকেও জেলাভিত্তিক ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরিতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। পরে ৩০ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বাহিনী থেকে অবাধ নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ইসি থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট কক্ষের সংখ্যা দুই লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি। এ ছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি। এবার প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ নারী ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসবির প্রতিবেদনে এরই মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করার কয়েকটি কারণও তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্র, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত অনেক ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে।
এসবির সুপারিশে বলা হয়েছে, ঝুঁকি মোকাবিলায় মাঠ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনে বাহিনীর আন্তঃকমান্ড নির্বাচন কমিশন থেকে নির্ধারণ করা যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে এসবির পক্ষ থেকে অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে নির্বাচনের আগে এসবি, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটেকেন্দ্রের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে থাকেন।
আগের নির্বাচনগুলোর মতো গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন বাহিনীর কতজন সদস্য ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবেন, তা নির্ধারণ করা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ১০ হাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। পরে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে তিনজন করে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। সেভাবেই বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে ইসি জানিয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী এনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত হয়েছে। ফলে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করার সুযোগ হয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল দিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ জন্য সবধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। প্রস্তুতি পর্বে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সমকালকে তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রগুলোকে ‘ঝুকিঁপূর্ণ’ না বলে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে থাকি। সব কেন্দ্রেই নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তারও কিছুই নেই।







