সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর আজ, এখনো শেষ হয়নি ‘৪৮ ঘণ্টা’

২০১২ সালের আজকের দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) নিজ বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনি। এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন ঢাকার একটি আদালত। এ নিয়ে ১১৫ বারের মতো প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় পেলো তদন্ত সংস্থা। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের ধরা হবে বলে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।

তা শুধু কথার কথা হিসেবেই ছিল। সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে ডিইউজে, বিএফইউজে, ডিআরইউসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন দাবি জানিয়ে আসছে।

গত ২৭ জানুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এদিন ধার্য করে আদেশ দেন।

২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। পরে নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলানগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন:  বরেণ্য সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী মারা গেছেন

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চেয়ে আনা রিটের আদেশ মডিফিকেশন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

বিষয়টি নিয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘আশা করি এবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং তদন্তের জন্য দেওয়া এবারের ছয় মাস মানে ছয় মাস।’ এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে হাইকোর্টে।

২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে শিশু মাহির সরওয়ার মেঘ।

সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।

নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলানগর থানার পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে র‌্যাব পায় তদন্তের দায়িত্ব।এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।

আরও পড়ুন:  সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে তলব করেছে ভারত

ঘটনার দুই মাস পরেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। ইতিমধ্যে এক যুগ পার হলেও মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১১৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, র‌্যাব এই মামলার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তারকৃত আট আসামি, নিহত সাগর-রুনি এবং স্বজনসহ ২৫ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে পাওয়ার পর অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনা করে দুইজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পেয়েছে। তবে তাতে সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি বলে সূত্র জানায়।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া তার অভিভাষণে বলেন, ‘আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে শতাধিকবার সময় নেওয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্তকাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা সময়ের আবর্তে মামলার অনেক সাক্ষী ও সাক্ষ্য হারিয়ে যায়।’

আরও পড়ুন:  পরিস্থিতি ঠিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় এক যুগ পর বাদীপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *