কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা, ২০০ বছরের পুরোনো মাজার ভাঙচুর

ময়মনসিংহ নগরে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহর (রহ.) মাজারের কাওয়ালি অনুষ্ঠানে গত বুধবার রাতে হামলা হয়েছে। এ সময় মাজারের কিছু অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জামিয়া ফয়জুর রহমান মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানার বিপরীত দিকে হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহর (রহ.) মাজার। এখানে ১৭৯তম বার্ষিক ওরস চলছে। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পারে সামা কাওয়ালির আয়োজন করেন ভক্তরা। 

রাত ১১টার দিকে গানের অনুষ্ঠান শুরুর এক পর্যায়ে অর্ধশত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে অনুষ্ঠানমুখী আসতে দেখে দ্রুত শিল্পীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়ে মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে রাত ৩টার দিকে হামলা হয় মাজারে। মাজারের পাকা স্থাপনার বেশ কিছু অংশ ও ভেতরে থাকা জিনিসপত্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:  আগামী ৩ দিনের আবহাওয়া কেমন হবে- জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

এদিকে মাজার ভাঙার খবরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভক্তরা জমায়েত হতে থাকেন। ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গানের আসরের মঞ্চের শামিয়ানা ছেঁড়া। অদূরে সৈয়দ কালু শাহর (রহ.) মাজারের সামনের অংশের দেয়াল, দানবাক্স ও ভেতরের বিভিন্ন জিনিসপত্র তছনছ করা।

বাউল শিল্পী মিজান বলেন, ‘হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহর (রহ.) মাজারে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। গত ৪৫ বছরে এমনটা দেখিনি। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমি যখন ইসলামিক গান পরিবেশন করছি, একদল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী এসে হামলা চালায়। হামলায় আমাদের দুই-তিনজন ভক্ত আহত হয়েছেন। এ সময় তারা প্লাস্টিকের চেয়ার, সাউন্ড সিস্টেম ও মঞ্চ ভাঙচুর করে। হামলার পর ওই রাতেই আবার মাজার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা।’

আরও পড়ুন:  ৮ বিভাগে হতে পারে বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি

অভিযোগের বিষয়ে জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদের প্রধান মুয়াজ্জিন শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে মাইক বাজিয়ে গানবাজনা করছিল মাজারের লোকজন। উচ্চ স্বরে গানবাজানোর কারণে ছাত্রদের পড়ায় সমস্যা হয়। এমন অবস্থায় ছাত্ররা গিয়ে গানের সাউন্ড কমাতে বলে। কিন্তু তা না করে গানের আসর থেকে উস্কানিমূলক কথা বলায় ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে গিয়ে ভাঙচুর করে।’

ময়মনসিংহের শিশুতীর্থ আনন্দধ্বনি সংগীত বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষ মো. মামুনুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন পীর-আউলিয়ার হাত ধরেই। ইরান-ইরাকের সুফি মতাদর্শ মিশে যে জাগরণ ঘটেছে, তার উদারতায় এ অঞ্চলের মানুষ ইসলামের আদর্শ গ্রহণ করে। অথচ আজ সেই আদর্শের জায়গাটিতে বারবার আঘাত হানা হচ্ছে। যারা এই উগ্রবাদী আচরণ দেখাচ্ছে, তারা মূলত ইসলামের আদর্শবিচ্যুত। আরবপন্থি অথবা সুফিপন্থি যাই হোক, কোথাও সংঘাতের স্থান নেই। ময়মনসিংহের মাজারে হামলা, ভাঙচুরসহ যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোতোয়ালি থানার নাকের ডগায় ঘটেছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই। এই কাজগুলো একেবারে ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ছড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। নিজ নিজ দর্শনে মানুষের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা অবশ্যই দিতে হবে। ধর্মের নামে এমন হীন কাজ আইন পরিপন্থি।’

আরও পড়ুন:  দেশের ১০ অঞ্চলের নদীবন্দরে সতর্কতা সংকেত

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রাখা হয়েছে। সবকিছু নজরদারিতে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *