যে কারণে গদি ছাড়তে হলো জাস্টিন ট্রুডোকে

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেছেন। সঙ্গে দলীয়প্রধানের পদও ছেড়েছেন তিনি। সোমবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন ৫২ বছর বয়সী ট্রুডো। ট্রুডো এমন সময় দলীয়প্রধানের পদ ছাড়লেন, যখন তাঁর দল লিবারেল পার্টির অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। দেশটিতে আগামী অক্টোবরে নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। এর মাত্র ৯ মাস আগে সরে গেলেন তিনি। ট্রুডো ২০১৩ সালে দলটির দায়িত্ব নেন। ওই সময়ও দলটির অবস্থা শোচনীয় ছিল। এর পর ২০১৫ সালে লিবারেল পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আনতে সমর্থ হন তিনি। পরে ২০২১ সালে আবারও তাঁর দল জয় পেলে প্রধানমন্ত্রী হন ট্রুডো।

এর পর ট্রুডোর জনপ্রিয়তা শুধু কমতে থাকে। সঙ্গে কমতে থাকে তাঁর দলের জনপ্রিয়তাও। ধারণা করা হচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় হবে লিবারেলদের। ইতোমধ্যে দুটি উপনির্বাচনে হেরেছে তারা। এর পর দলের মধ্য থেকে ট্রুডোর পদত্যাগের দাবি উঠতে থাকে।

আরও পড়ুন:  রাশিয়ায় ৭ হাজার কনটেইনার অস্ত্র পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া : সিউল

রয়টার্স জানিয়েছে, জাস্টিন ট্রুডোর গদি নড়বড়ে হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রভাব রেখেছে। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে নিজের অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পেছনে লাগেন তিনি। ট্রুডো সরকারি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও এটির বিরোধিতা করেন ক্রিস্টিয়া। এর পর তাদের দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। ওই সময় তিনি অভিযোগ করেন, দেশের ভালোর জন্য কাজ না করে ট্রুডো ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলছেন। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের পর ট্রুডোর পদত্যাগের চাপ জোরালো হয়।

এ ছাড়া জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ ট্রুডোর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। যদিও ভোক্তার স্বার্থ ও ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে দেশটি বিপুল খরচ করে থাকে। তা সত্ত্বেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম আরেকটি বড় কারণ ত্রুটিপূর্ণ অভিবাসন নীতি। তাঁর আমলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ কানাডায় এসেছেন; যা দেশটির আবাসনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। চাহিদার তুলনায় আবাসনের সংখ্যা কম হওয়ায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ।

আরও পড়ুন:  কানাডায় লিবারেল পার্টির জয়, প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি

এদিকে এনডিটিভি দাবি করেছে, ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে ট্রুডোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তাদের মতে, ট্রুডো তাঁর ব্যর্থতা ঢাকতে স্বাধীন খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদ্বীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আনেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রুডো জানান, এই শিখ নেতাকে হত্যায় ভারত সরকার জড়িত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রুডো ভারত ইস্যু সামনে এনে ব্যর্থতা ঢাকা এবং শিখদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করলেও বিষয়টি উল্টো হয়েছে। অনেক কানাডিয়ান মনে করেন, জাতীয় ইস্যু থেকে নজর সরাতে তিনি ভারতীয় ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করছেন। ট্রুডোর ক্ষমতা ছাড়ার খবরে ভারতে উল্লাস চলছে।

কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর ছেলে হিসেবে জাস্টিন ট্রুডোর সফলতার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন অনেকেই। অবশেষে ৪৪ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সফল হয়েছিলেন ট্রুডো।

আরও পড়ুন:  কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়নি: প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং

অন্যদিকে বিরোধী নেতা কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোইলিভের সমালোচনা করেছেন ট্রুডো। তিনি বলেন, দেশটির জন্য বিরোধী নেতার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করার কোনো মানে হয় না। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ভবিষ্যতের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। কিন্তু পোইলিভের সেই দৃষ্টিভঙ্গি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *