একাত্তরকে সবার মনে রাখা দরকার: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের প্রত্যেককে আমাদের মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের আজ ছিল প্রথম দিন। এ সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ।

সংলাপে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটা অত্যন্ত জটিল রাজনৈতিক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আজকে যে প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন। জাতিগতভাবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজকে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। খুব ভালো হতো, যদি আমরা প্রথম থেকেই এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে সামনে এগোতে পারতাম।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, খুব জরুরি কথা, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই। একাত্তর সালকে আমরা কখনো ভুলে না যাই। একাত্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিক যে লড়াই-সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের প্রত্যেককে আমাদের মনে রাখা দরকার। সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে, ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আজকে আমরা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।

আরও পড়ুন:  সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আটক

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সাল থেকে বিএনপি সংগ্রাম শুরু করেছে ও অবস্থান নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, সে সময় আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, অনেক নেতাকে পঙ্গু করা হয়েছে, কারাগারে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দলের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের সাত শতাধিক নেতা-কর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আয়নাঘরের কথা সবাই জানেন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায়ও আমরা কখনো থেমে থাকিনি। আমরা প্রথম থেকেই সোচ্চার থাকার চেষ্টা করেছি, তখন অনেককেই আমরা সঙ্গে পাইনি। এখন আমরা তাঁদের সামনে দেখছি, আমাদের খুব ভালো লাগছে।

সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি অত্যন্ত আন্তরিক বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ২০১৬ সালে বিএনপির ভিশন ২০৩০, ২০২২ সালে প্রথমে ১০ দফা ও পরে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন। বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:  ১৩ লাখ রোহিঙ্গার ভার আর বহন করা সম্ভব নয়: জাতিসংঘে বাংলাদেশ

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, এখন কিছু কিছু বক্তব্য আসছে যে বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। এ কথাটা সঠিক নয়। আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য ন্যূনতম যে সংস্কার প্রয়োজন, সেই সংস্কারটুকু করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই।

ইমপোজ করে (চাপিয়ে দিয়ে) কোনো কিছু করার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেছিল এবং জরুরি মনে করেছে। কিন্তু আমরা যদি তখন রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে চলে যেতাম, সেটা জনগণ গ্রহণ করত না বলে আমার কাছে মনে হয়। আমার ধারণা, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না। আপনাকে জনগণকে তৈরি করতে হবে।

যারা সংস্কার কমিশনগুলোয় আছেন, তারা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ড. আলী রীয়াজ (সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান) বলেছেন, ‘তাদের কাছে এক লাখের ওপর বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব এসেছে। খুব ভালো কথা। আমি শুনেছি তারা তাদের প্রস্তাব তৈরি করে সরকারের কাছে দেবেন এবং সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তারাই (কমিশন) যদি আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতেন, আমার মনে হয়, সেটা আরও কার্যকরী ও ভালো হতো। এখন সরকার বসবে, আলোচনা হবে, আরও সময় লাগবে। যত বেশি সময় যাবে, আমাদের কাছে মনে হয়, সমস্যাগুলো তত বাড়বে। আসল সমস্যা তো অন্য জায়গায়। আপনি এগুলো বাস্তবায়ন করবেন কাদের দিয়ে?

আরও পড়ুন:  শমী কায়সারের ব্যবসায়িক তথ্য তলব করছে বিএফআইইউ

এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, আপনার সেই প্রশাসন, সরকারের মেশিনারি তো পুরোপুরিভাবে এখনো ফ্যাসিবাদের মধ্যে আছে। এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। কাঠামোটা যদি না থাকে, শুধু ওপর থেকে চাপিয়ে দিলেই আমরা দ্রুত কোনো কিছু করতে পারব না। তাই আমাদের কাঠামোটা ঠিক করতে হবে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্রের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলেই আমরা গণতন্ত্রকে সফল করতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *