বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় পাকিস্তানের মাটিতে

ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয়, অতুলনীয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট জয়কে এই শব্দগুলো দিয়ে বর্ণনাও হয়তো যথেষ্ট নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়, পাকিস্তানের মাটিতে যেকোনো সংস্করণে প্রথম জয়; একাধিক দিক দিয়েই ১০ উইকেটের এই জয় বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক।

দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেট টেস্টে এই প্রথম ১০ উইকেটে জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে টাইগারদের জয় এল ১৪তম বারের প্রচেষ্টায়। এর আগে বিগত ১৩ টেস্টের ১২টিতেই হারে বাংলাদেশ। কেবল ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টটি ড্র হয়েছিল। টেস্টে এখন বাংলাদেশের কাছে অপরাজিত কেবল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি সব দেশকেই হারিয়েছে টাইগাররা।

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রান তুলে অলআউট হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে টাইগাররা লিড পায় ১১৭ রানের। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ১৪৬ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। তাতে ২৯ রানের লিড দাঁড়ায় স্বাগতিকদের। ৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন:  ২৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা এলো আগস্টে রেমিট্যান্স

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৩ রান নিয়ে পঞ্চম দিনে খেলতে নামে পাকিস্তান। বাংলাদেশ থেকে তখনো পিছিয়ে ৯৪ রানে। পঞ্চম দিনের শুরু থেকেই স্বাগতিক ব্যাটারদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুতেই পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদকে ফিরিয়ে দেন পেসার হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ বাবর আজম সাবলীল ব্যাটিং শুরু করলেও তাকে ২২ রানের বেশি করতে দেননি বাংলাদেশের তরুণ পেসার নাহিদ রানা। সরাসরি বোল্ড করেন দলটির সেরা ব্যাটারকে।  দিনের প্রথম দুই উইকেট পেসাররা নিলেও বাকি গল্প লেখেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। মরা উইকেটে যেন প্রাণের সঞ্চার করেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। টার্নের সঙ্গে বাউন্সও আদায় করছিলেন তারা। এই দুই স্পিনারের বিধ্বংসী বোলিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ।

আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি করা সৌদ শাকিলকে এদিন কোনো রান করার আগেই ফিরিয়ে দেন সাকিব। ৬৭ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা পাকিস্তান কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করে পঞ্চম উইকেটে। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৩৭ রানের জুটি গড়েন আবদুল্লাহ শফিক (৩৭)। তবে সাকিব ম্যাজিকে সুবিধা করতে পারেননি তারা। দলীয় ১০৪ রানের মাথায় বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাকিস্তান ওপেনার।

আরও পড়ুন:  ১৭ বছর আমরা গাছের গোড়ায় পানি ঢেলেছি, আপনারা এখন ফল খাচ্ছেন : মির্জা আব্বাস

শফিক ফেরার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে পাকিস্তান ইনিংস। ক্রিজে এসেই গোল্ডেন ডাক মারেন আগা সালমান। মিরাজের টার্ন বুঝতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ উঠিয়ে দেন তিনি। ছো মেরে সেটি লুফে নেন সাদমান ইসলাম। শাহিন আফ্রিদি ১৬ বল খেললেও ২ রানের বেশি করতে পারেননি। দলীয় ১১৮ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ফেরেন নাসিম শাহও। তখন পাকিস্তানের লিড মাত্র ১ রানের। এরপর খুররম শেহজাদকে নিয়ে ২৪ রান যোগ করে দলীয় সংগ্রহ ১৪২ রানে নিয়ে যান রিজওয়ান। তবে একা আর প্রতিরোধ করতে পারেননি তিনি। এই রানে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে যান পাকিস্তান উইকেটরক্ষক। ফেরার আগে অবশ্য ৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। শেষ ব্যাটার মোহাম্মদ আলিকেও ‘শূন্য’ রানে ফেরান মিরাজ। পাকিস্তান অলআউট হয় ১৪৬ রানে।

আরও পড়ুন:  সংস্কৃতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলার বৈপ্লবিক উপাদান : রাহাত ফতেহ আলী খান

বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল বোলার মিরাজ। ১১.৫ ওভার বল করে মাত্র ২১ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। ১৭ ওভার বল করে ৪৪ রান খরচায় সাকিবের শিকার ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট তিন পেসার নাহিদ, শরিফুল ও হাসানের।

৩০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অনেক ওভার থাকলেও কোনো সময় নিতে চাইলেন না দুই বাংলাদেশ ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। ৬ ওভার ৩ বলেই বাংলাদেশকে লক্ষ্যে পৌঁছে নেয় তারা। ২ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

 

…….ডিডিজে নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *