বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। দেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন করা হবে।

এ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা, ধ্যান ও বুদ্ধ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মানব জাতির সর্বাঙ্গীণ শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটি থাকবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংবর্ধনা দিবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৪টায় বৌদ্ধ নেতাদের সংবর্ধনা শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গণমাধ্যমের মাধ্যমে সারাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বৌদ্ধ নেতাদের শুভেচ্ছা জানাবেন। বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারাও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া উপহার দিবেন। আটশ’র অধিক অতিথিসহ এক হাজারেরও বেশি ব্যক্তি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানিয়েছে আরও আটটি দেশ

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এ উপলক্ষে টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার এবং জাতীয় পত্রিকাসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর এক বাণীতে বলেন, একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অহিংস পরম ধর্ম’- বুদ্ধের এই অমিয় বাণী আজও সমভাবে প্রযোজ্য।

আজকের এই অশান্ত ও অসহিষ্ণু  বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত হানাহানি রোধসহ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন:  প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মহামতি গৌতম বুদ্ধের শুভ জন্ম, বোধিজ্ঞান লাভ ও মহাপরিনির্বাণ এ উৎসবের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি-‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সকল শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই আমাদের  প্রধান লক্ষ্য।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ লোভ, দ্বেষ, লালসাকে অতিক্রম করে জীবন ও কর্মের মাধ্যমে মানবজগতকে আলোকিত করেছেন। তিনি ছিলেন সত্য ও সুন্দরের আদর্শে উজ্জীবিত।

তিনি বলেন, “আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ যুগযুগ ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। আমি আশা করি, গৌতম বুদ্ধের আদর্শ ধারণ ও লালন করে সকলে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন।”

আরও পড়ুন:  প্রধানমন্ত্রী আজ রাতে মিউনিখ ত্যাগ করবেন

গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।

বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *