যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের চালর্জ ম্যাকডোনাল একটি ব্যস্ততম জায়গা। এটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের মানুষের ঘাঁটি বলা যেতে পারে। এখানে শতকরা ৯০% মানুষ সন্দ্বীপের। গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সন্দ্বীপের মানুষের আধিপত্য এই এলাকাজুড়ে। এখানে পাশেই রয়েছে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসতি। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এখানে মানুষের মেলা বসে। সন্দ্বীপের মানুষ এখানে গড়ে তুলেছে সন্দ্বীপপাড়া। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে এলাকা প্রীতি এখানে প্রবল। আরও চোখে পড়ে নোয়াখালী এবং সিলেটের মানুষের।
এখানে চারটি সড়ক প্রতিদিন সন্ধ্যায় থেকে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। চলে মধ্যরাত অবধি। ভাই বন্ধু পাড়া-প্রতিবেশী সহপাঠী আত্মীয়-স্বজন মিলে চলে এ আড্ডা। আড্ডার বিষয় ও খুব সীমিত কিছু বিষয়ের উপর আলোচনা। আড্ডা আলোচনা সব কিছু মধ্যেই থাকে সন্দ্বীপ। সন্দ্বীপের মানুষ এখানে মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে কোমল আড্ডা দিয়ে থাকে। আড্ডাবাজ এই মানুষের ঠিকানা ম্যাকডোনাল।
এখানে রয়েছে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। ভোজন রসিক বাঙালি খেতে ভালোবাসে। এসব রেস্টুরেন্টে চা কফি বাঙালি খাবারের মহাসমারহ। বাঙালি খাবারে চাহিদা এখানে প্রচুর। প্রতিটি ঘরে খাবার থাকা সত্ত্বেও তারা মধ্যরাত অবধি আড্ডা দিয়ে থাকে। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চলে মিষ্টি দই মিষ্টি রুটি পরোটা মাংস সবজি সহ অনেক রকমের মুখ খাবারের আসর।
কেউ কেউ সপ্তাহে অন্তত একদিন দলবেঁধে খেতে বসে অথবা চলে কোন পার্টি। ম্যাকডোনাল এর নিকটবর্তী কনে আইল্যান্ডে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দেশি-বিদেশী রেস্তোরাঁ। এসব রেস্তোরাঁ অসংখ্য মানুষ দল বেঁধে খেতে যাই। এরমধ্যে টার্কিশ পাকিস্তানি ইন্ডিয়ান এবং উজবেকিস্তানের বিশেষভাবে চোখে পড়ে।
রাঁধুনি রেস্টুরেন্ট ম্যাকডোনালের জনপ্রিয় একটি রেস্তোরাঁ। আরো রয়েছে হালাল বাস্কেট রাজমহল ঘরোয়া আব্দুল্লাহ সহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ। যেখানে সব গ্রাহকই হচ্ছে সন্দীপের। অথচ সন্দ্বীপের মালিকানায় নেই কোন রেস্তোরাঁ। মেঘডোনালের দৃষ্টিনন্দন সড়কের পাশেই রয়েছে লিটল বাংলাদেশ নামে একটি সাইনবোর্ড। গতবছর এটিকে লিটল বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এখানকার সিটি প্রশাসন।
লিটল বাংলাদেশের ই রয়েছে একটি সড়ক। বাঙ্গালীদের যে কোন আচার অনুষ্ঠান করার জন্য এই সড়কের নামকরণ করা। নোয়াখালী ভবন দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই একদল রয়েছে সন্দীপ সোসাইটির অফিস। আড্ডা প্রিয় বাঙালি পৃথিবীর যেখানে থাকুক না কেন তারা গড়ে তোলে সম্পর্কের মেলবন্ধন। এখানে রয়েছে ভুরি ভুরি সংগঠন। সন্দ্বীপের বিভিন্ন ইউনিয়নের নামে এক একটি করে সংগঠন রয়েছে। পুরো সন্দীপ নিয়ে রয়েছে সন্দ্ব ীপ অ্যাসোসিয়েশন এবং সন্দীপ সোসাইটি ইউএসএ। এছাড়াও সক্রিয় রয়েছে প্রতিটি পাড়া মহল্লার সংগঠন। বাংলাদেশীদের বড় কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। রয়েছে জেলাভিত্তিক সংগঠন উপজেলাভিত্তিক সংগঠন। সংগঠনের সাংগঠনিক তৎপরতার জন্য ম্যাকডোনাল উপযুক্ত জায়গা।
এখানে রাজনীতি এবং সমাজ নীতি পরিচালিত হয় এখান থেকে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ এবং উপজেলার যে কোন বিষয় নিয়ে এখানে চুল ছাড়া বিশ্লেষণ চলে ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রবাসী অধ্যুষিত সন্দ্বীপের মানুষ রয়েছে ভিন্ন ধরনের আবেগ। এ আবেগ অনুভূতির তীর্থস্থান ম্যাকডোনাল। এখানে সন্দ্বীপের মানুষের সরগরম উপস্থিতি। সবার হাতে হাতে পর্যাপ্ত পয়সা যার ফলে উপজেলার প্রতি তারা বরাবরই সচেতন। প্রতিটি মানুষের দেশপ্রেম জানান দেয় বাঙালি রা দেশের বাহিরে কত বেশি শক্তিশালী। এখানে আসলে মনে হবে আপনি সন্দীপে আছেন। মানুষের মানুষের ভালোবাসা আর এলাকা প্রতি এখানে ভিন্নভাবে ধরা দেয়। সাগর সংগ্রামে মানুষের গল্প। সাগর পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার মাইন্ড দূরে গড়ে তুলেছে বসতি।
সম্পর্ক আর সোহাগদের অপরূপ মেলবন্ধন এই নিউ ইয়র্কে দেখা যায়। প্রায় সত্তর বছর আগে সন্দ্বীপের মানুষ থেকে এখানে নানান ভাবে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা কালক্রমে পরিবার পরিজন এবং আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে এসেছেন এখানে। ফলে হাজার হাজার মানুষের বসতিতে রূপ নিয়েছে ব্রুকলিন। সন্দ্বীপের মানুষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে ওজন পার্ক। ওজন পার্কে গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় অপেক্ষাকৃত বড় বসতি। লিবাটি আইল্যান্ড প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা জমে থাকে মানুষের আনাগোনা। সেখানেও রয়েছে কিছু রেস্তোরাঁ। ফুলকপি মোমোজ রাঁধুনি বৈঠক খানা উল্লেখ্যযোগ্য।
এখানেও ম্যাকডোনালের মত মানুষের ভরপুর উপস্থিতি। খাওয়া দাওয়া ভরপেট চলতে থাকে। এখানে সিলেট নোয়াখালী ভরপুর। আশপাশের সন্দ্বীপের লোকজন বাড়ি কিনে আধিপত্য তৈরি করেছে। ফলে অন্য জায়গার মানুষ তাদের আত্মীয় প্রীতির কাছে অসহায়। আমেরিকান জীবন এখানে অনুপস্থিত। এখানে সন্দ্বীপের নিয়ম কানুন । কথাবার্তায় আঞ্চলিক অনুষঙ্গের আধিপত্য।







