এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদে বেসরকারি কোনো মহাকাশযান সফলভাবে অবতরণ করল। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা হিউস্টনের ইনটুইটিভ মেশিন নির্মিত ওডিসিয়াস রোবট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মালাপের্ট নামের চন্দ্রখাতের কাছে অবতরণ করে।
এ ছাড়া অবতরণের পর পাঠানো প্রথম ছবিতে দেখা গেছে, পাথুরে ও ক্ষতবিক্ষত ভূখণ্ড, যেখানে ব্লু ঘোস্টকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেভিগেট করতে হয়েছে চূড়ান্ত অবতরণের সময়। ওই সময় এটিকে কয়েক হাজার মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ থেকে মাত্র দুই মাইল প্রতি ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়।
নাসার গবেষণা
এই অভিযানটির ডাকনাম দেওয়া হচ্ছে ‘ঘোস্ট রাইডারস ইন দ্য স্কাই’ নামে। এই অভিযানটি নাসা-শিল্প অংশীদারির অংশ, যার লক্ষ্য আর্টেমিস মিশনের ব্যয় হ্রাস করা।
এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানি ‘ইনটুইটিভ মেশিনস’। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ মিশনের পর চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর প্রথম ঘটনাও ছিল এটি। যদিও একটি দুর্ঘটনার কারণে ইনটুইটিভ মেশিনসের সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। অবতরণের সময় ল্যান্ডারটি খুব দ্রুত নেমে আসায় গতির কারণে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। যার ফলে ল্যান্ডারটি পর্যাপ্ত সৌরশক্তি উৎপাদন করতে পারেনি। এ কারণে ওই অভিযানটি সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তবে ইনটুইটিভ মেশিনস অবশ্য থেমে নেই। নতুন অভিযান শুরু করেছে তারা।
আরো একটি ল্যান্ডার আসছে
এদিকে ইনটুইটিভ মেশিনসের তৈরি অ্যাথেনা নামের ষড়ভুজাকৃতির ল্যান্ডারটিতে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা যোগ করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। এবারের ল্যান্ডারটি ব্লু ঘোস্টের চেয়ে লম্বা ও হালকা। এর উচ্চতা প্রাপ্তবয়স্ক জিরাফের উচ্চতার কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনিটে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেট থেকে অ্যাথেনা ল্যান্ডারটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা টেলিযোগাযোগ সংস্থা নোকিয়ার সহযোগিতায় এই ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করে।
সব ঠিক থাকলে এটি ৬ মার্চের দিকে চাঁদের বিশাল মনস মাউটন মালভূমিতে অবতরণ করবে।
নাসার এই অভিযানের জন্য নোকিয়া কম্পানির নোকিয়া বেল ল্যাবস চাঁদের জন্য প্রথম সেলুলার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা মহাকাশচারীদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য কাজ করবে। এর মাধ্যমে মহাকাশচারীরা শুধু ভয়েসই নয়, ইন্টারনেট পরিষেবাও ব্যবহার করতে পারবেন।
চাঁদে অবতরণ করা অত্যন্ত জটিল। কারণ সেখানে বায়ুমণ্ডল না থাকায় প্যারাশুট কাজ করে না। তাই মহাকাশযানগুলোকে নির্ভুলভাবে নিয়ন্ত্রিত থ্রাস্টার জ্বালিয়ে ধীরে অবতরণ করতে হয়, যাতে দুর্গম ভূখণ্ড এড়িয়ে যাওয়া যায়।
ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রথম মিশনের আগ পর্যন্ত শুধু পাঁচটি জাতীয় মহাকাশ সংস্থা চাঁদে সফল অবতরণ করেছিল—সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও জাপান।
এই মিশনগুলো এমন এক সময় হচ্ছে, যখন নাসা তাদের আর্টেমিস কর্মসূচি কমিয়ে আনার বা বাতিল করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে, যাতে মঙ্গল গ্রহের অনুসন্ধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়—যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
সূত্র : এএফপি







