গণহত্যার ঘটনা জানল বিশ্ব

নতুন বাংলাদেশের পাশে হোয়াইট হাউস। জানিয়েছে পাশে থাকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখে ছাত্র-জনতার রক্তস্রোত ও গণহত্যার ঘটনা জানল সারা দুনিয়া।

গতকাল রাত ৯টায় ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণপূর্ব ২০টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন তিনি। যেখানে সারা দুনিয়ার প্রথম সারির নেতারা অংশ নেন। ৩৬ জুলাই কীভাবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়েছে, সেগুলো তুলে ধরেন ড. ইউনূস। গত এক যুগেরও বেশি সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ আর মৃত্যুভয় করেনি। গুলির মুখে তরুণরা তাদের বুক এগিয়ে দিয়েছেন। এতে শত শত মানুষ নিহত হন। আহত হন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। তুলে ধরা হয় আবু সাঈদের ঘটনাও। সারা দেশে তরুণরা কীভাবে রাজপথে থেকে একটি গণবিপ্লব করেছেন— সেটিও তুলে ধরা হয়।

এতদিন যেসব বিশ্বনেতা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতেন না, তারাও এখন একটি নতুন বাংলাদেশের কথা জেনেছেন। একটি রক্তস্রোতের নতুন দেশ সম্পর্কে জেনেছেন। নতুন স্বাধীনতা পাওয়া একটি বাংলাদেশের গল্প এখন বিশ্বনেতাদের স্মৃতিতে ধারণ হয়ে আছে। গতকাল চূড়ান্ত ভাষণেও আবু সাঈদসহ সব বীরের ভূমিকা তুলে ধরেন ড. ইউনূস। বিপ্লবের গল্প জানার পর এখন বিশ্বনেতারা ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে চান। তরুণ সমাজ একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যে কারণে জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই কাজে সম্পৃক্ত থাকতে চান। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের স্বপ্ন ও ভূমিকা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ইউনূসের পাশে থাকতে চায় বিশ্বমঞ্চ।

আরও পড়ুন:  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট নয় বিএনপি

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যুবসমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে।  একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছেন। তরুণদের এই স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমরা তাদের হতাশ করতে চাই না।

গত বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (ইউএনজিএ) ফাঁকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ড. ইউনূস করিম খানের কাছে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইসিসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান তিনি। এ বিপ্লবে কমপক্ষে ৭০০ জন শহীদ হয়েছেন এবং ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন:  জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় আপিল বিভাগে বহাল

করিম খান বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই হেগ-ভিত্তিক আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারে। তবে তিনি বলেন, আইসিসিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের জন্য যথাযথ নিয়মাবলি অনুসরণ করতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রতিষ্ঠান ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গল্প তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। বাংলাদেশের তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বেন বলে আশা প্রকাশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ আন্দোলন খুব পরিকল্পিতভাবে চালিয়ে নেয়া হয়েছে। কিছুই হঠাৎ করে হয়নি। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব এবং এরপর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক বিল ক্লিনটনকে উপহার দেন।

ড. ইউনূস বলেন, যুবসমাজের সামনে কোনো স্বপ্ন ছিল না। স্বৈরাচার তাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তাই তারা স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে বুলেটের সামনে দাঁড়াতে পিছপা হয়নি। বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণরা যে সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে, তা আমাদের অভিভূত করেছে। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা পঙ্গুত্ব বরণ করতে পিছপা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘তরুণদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে আমরা আপনাদের পাশে চাই।’

আরও পড়ুন:  বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে এবং এ বিষয়ে তারা বিশ্বকে জানাতে চান, যাতে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল— সে নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ না থাকে। তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সম্মানিত এবং সব দেশ তার বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। অধ্যাপক ইউনূস তার ভাষণে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান এবং আগামী দিনে জনমুখী, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে তার দৃঢ?প্রত্যয়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই অধিবেশন জাতিসংঘ বা বিশ্বমঞ্চে নতুন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন পদক্ষেপ। এই অধিবেশনে বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক এমন বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার দারুণ সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে।’

 

…….ডিডিজে নিউজ/এম এফ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *