আবু সাঈদের কথা স্মরণ হবে কাজের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

রংপুরের পীরগঞ্জে গতকাল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস – পিআইডি . অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান নন, বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান।

যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা আবু সাঈদের কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। তার (সাঈদ) কথা স্মরণ হবে এই কাজ করার মধ্য দিয়ে। এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের। আবু সাঈদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। গতকাল শনিবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে জাফরপাড়া গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে যান ড. ইউনূস। সাঈদের কবর জিয়ারত করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোকÑ সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়। আমরা সবাই এই মাটির সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি। আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে, আমরা তেমন না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে,

আরও পড়ুন:  মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে ফের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

তার বোনদের রক্ষা করতে হবে, তার ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। সে নিজেই এখন ইতিহাস। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সাহস নিয়ে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছে। সৃষ্টি করেছে নতুন বাংলাদেশ। দেশের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে সবাই সে ইতিহাস জানবে।

প্রধান উপদেষ্টা গতকাল নিহত আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাঈদের মা ও পরিবারের সদস্যরা। ড. ইউনূসের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মহাকাব্যের নায়ক

দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট রুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময়কালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা মহাকাব্য পড়ে থাকি। আবু সাঈদ হলো সেই মহাকাব্যের নায়ক। ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে অনেক কবিতা, গল্প ও সাহিত্য লেখা হবে। আবু সাঈদ চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। তার গুলি খাওয়ার যে ছবি মানুষ দেখল, এরপর মানুষকে আর থামানো যায়নি। তোমরা দ্বিতীয় বিজয় এনে দিয়েছ। দেশের মানুষ এ বিজয়ের সুফল ভোগ করবে। এই আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি শোনেন এবং সেগুলো পূরণের আশ্বাস দেন।

আরও পড়ুন:  তিন বছরের ঋণের পরিকল্পনা জানতে চাইবে আইএমএফ

পরে প্রধান উপদেষ্টা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের দেখতে যান। এ সময় তিনি আহতদের অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। বেলা পৌনে ১১টার কিছু আগে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে পীরগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে পৌঁছান ড. ইউনূস। এরপর আবু সাঈদের বাড়ি অভিমুখে সড়কপথে রওনা হন। সেখানে পৌঁছার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন। ভাস্কর্য না বানানোর আহ্বান পরিবারের এর আগে গত শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আবু সাঈদের নামে কোনো ভাস্কর্য না বানানোর আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার। আবু সাঈদের বাবা ও তার বড় ভাইয়েরা এ আহ্বান জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘আপনারা সবাই অবগত আছেন, আমার ছেলে আবু সাঈদ গত ১৬ জুলাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসরের গুলিতে শহীদ হয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, কিছু লোক শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। শহীদ আবু সাঈদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আপনারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আপনাদের ভালোবাসাকে সম্মান করি। কিন্তু আমার ছেলেটাকে কত কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। আমি চাই না আমার ছেলে দুনিয়াতে যেমন কষ্ট পেয়েছে, আখেরাতেও তেমন কষ্ট পাক। আমরা মুসলমান। আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করি। যেহেতু ইসলাম ধর্মে সব মূর্তি, ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ, সেহেতু আপনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, দেশের কোনো স্থানে আমার ছেলের মূর্তি বা ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি যেন না বানানো হয়। আপনাদের অনুরোধ করছি, আমার ছেলের জন্য যদি কিছু করতে চান, তা হলে জনকল্যাণমুখী এমন কিছু কাজ করুন, যার সওয়াব আবু সাঈদ কবরে পাবে। আমরা আপনাদের কাছে শহীদ আবু সাঈদের জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আমাদের জন্যও দোয়া চাই।’

আরও পড়ুন:  বিচারের পর আ‘লীগ নির্বাচন করতে পারবে: ড. ইউনূস

…….ডিডিজে নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *