বাজেটে আইএমএফের পরামর্শের প্রতিফলন থাকছে

মোহাম্মদ ফয়সাল আলম:

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর পরামর্শ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী, বাজেটের আকার ছোট রাখা, বাজেট ঘাটতি কমানো, এবং রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি, কর ছাড় কমানো, ভর্তুকি হ্রাস করা, এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা বৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের অনিয়ম রোধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে উপকারভোগীদের সঠিকভাবে নির্বাচন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার তাগিদও রয়েছে। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে, এবারের বাজেটের আকার গত বছরের তুলনায় ৫-৮ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে, যেখানে পূর্ববর্তী বাজেটগুলিতে সাধারণত ১২-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হতো। এছাড়াও, বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়, যা আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

আইএমএফের সুপারিশের আলোকে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এবং এ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে জোরদার করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফ যে শর্তগুলো দিয়েছে, যেমন ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং রিজার্ভ শক্তিশালী করা, সেগুলোর বাস্তবায়নে সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

আরও পড়ুন:  জিম্মি নাবিকদের চলতি মাসেই ফিরিয়ে আনার আশা নৌ প্রতিমন্ত্রীর

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ বলেছেন, রাজস্ব খাতে যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা পূর্বে সম্পন্ন করতে পারিনি। আইএমএফ আমাদেরকে এই সংস্কারগুলো পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, এই সংস্কারগুলো অনেক আগেই সম্পন্ন করা উচিত ছিল, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকার রাজস্ব খাতকে আরও শক্তিশালী করতে এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কার্যকারিতা বাড়াতে কাজ করছে, যা দেশের আর্থিক কাঠামোকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজেট বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কম, যা আইএমএফের শর্তাবলীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:  রোববার বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করবেন প্রধান উপদেষ্টা

এছাড়া, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশেরও কম হতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইতোমধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ০১ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে সরকার বাজেট এবং প্রবৃদ্ধি নিয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে কাজ করছে, যাতে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা যায় এবং আইএমএফের শর্তগুলো পূরণ করা যায়। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাথমিকভাবে জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হলেও সংশোধিত বাজেট সাত লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণে ঘাটতি কমিয়ে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়। আগামী অর্থবছরে এ ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা করছে।

আরও পড়ুন:  রক্তচাপ কমায় বিটের রস, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস

অন্যদিকে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকি বন্ধের দিকে এগোচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ যে বরাদ্দ থাকবে, তা মূলত চলতি অর্থবছরের ভতুর্কির বকেয়া পরিশোধে ব্যয় হবে। তাই ভর্তুকির পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে। এ ছাড়া আসন্ন বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, স্মার্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *