রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কনসার্টে ভয়াবহ হামলায় ১৪৩ জন নিহত হয়েছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে মস্কোর ক্রোকাস সিটি কমপ্লেক্সে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১১ জনকে আটক করা হয়েছে যাদের মধ্যে চারজন সরাসরি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির নিরাপত্তা প্রধান। এদিকে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।

নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, ‘মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গুলির আঘাতে এবং রাসায়নিকের বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, কনসার্ট হলে সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে এতে ব্যবহার করা হয়েছে অটোমেটিক রাইফেল। হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলসহ অন্য যেসব অস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফেলে গেছে সেগুলো জব্দ করেছেন তদন্তকারীরা।’

এ ছাড়া কনসার্ট হলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা দাহ্য তরল পদার্থ ব্যবহার করেছে। মস্কোর উপকণ্ঠে অবস্থিত ক্রোকাস সিটি হলের ওই কনসার্টে বন্দুক হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)।

ইতোমধ্যে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

আরও পড়ুন:  পোশাক প্রস্তুতকারকদের দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করার আহ্বান ড. ইউনূসের

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স হামলার যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে এবং হলের মধ্যেই বোমা ছুড়ছে। অডিটোরিয়ামের ছাদে আগুন লেগে চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত চলা এই হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। গুলি চালানো বন্ধ হলে লোকজন সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পাঁচজন বন্দুকধারী হামলাতে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের হাতে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সামরিক অস্ত্র ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। হামলাকারীরা ওই হলের নিরস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে ভেতরে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। এ সময় তারা ভেতর থেকে হলটি বন্ধ করে রাখে।

কনসার্ট হলের একেবারে ভেতরে ঢুকে সেখানে থাকা চেয়ারগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। ওই আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন গোলাগুলির শব্দের পাশাপাশি ভবনে বোমা বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছেন তারা।

রাশিয়ার আপদকালীন মন্ত্রণালয় তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, হামলার হাত থেকে বাঁচতে হলের বেসমেন্টে প্রায় ১০০ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। হলের ছাদেও আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। সবাইকেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:  যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধে চাপে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা করা উচিত।’ হামলার নিন্দা করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এই হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের কোনো যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই ঘটনায় জাতিসংঘ, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ শোক প্রকাশ করেছে। এদিকে হোয়াইট হাউস বলছে, তারা সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে কাজ করছে। তবে এ হামলায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে ইউক্রেন।

হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে, মার্চের শুরুতেই মস্কোতে ‌‘বড় সমাবেশ’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হতে পারে এ বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে মস্কোয় একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য ছিল। কনসার্টসহ বড় ধরনের সমাবেশ লক্ষ্য করে হামলার সম্ভাবনা ছিল এবং এ বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রোতে একটি বোমা হামলার ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়।

রাশিয়ার বার্তাসংস্থা টাস নিউজ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির বরাতে জানিয়েছে, হামলার আগে গোপন জায়গায় অস্ত্রগুলো প্রস্তুত করেছে এই সন্ত্রাসীরা। হামলা চালানোর পর তারা রাশিয়া থেকে ইউক্রেন সীমান্ত পার হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল এবং তাদের সঙ্গে ইউক্রেন সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ ছিল। সন্ত্রাসীরা খুবই পরিকল্পনা করে এই হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন:  ব্রাজিলের কাছে প্রেসিডেন্সি হস্তান্তর করলেন মোদি

বলা হচ্ছে, প্রায় ২০ বছরের মধ্যে এটাই রাশিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা। এদিকে এ হামলার ঘটনায় ভারত এবং চীন রাশিয়ার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে, সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য রুশ সরকারের প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।

অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে এ ‌‘জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ভয়াবহ এ শোকের সময় রুশ সরকার এবং এর জনগণের প্রতি তার দেশ সংহতি প্রকাশ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *