চট্টগ্রাম-৩, সন্দ্বীপ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান মিতা। রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নৌকার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন
করেছিলেন। সেই নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা। সময়ের পরিক্রমায় নৌকার মাঝিও পরিবর্তন
হয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে তৃণমূলে ভোটার সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বাড়ছে। নির্বাচনের ধরণ, জয়-পরাজয় নিয়ে নানান সমীকরণ করছেন রাজনৈতিক
বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ।
এদিকে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে আর বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনীত প্রার্থীদের একজন
করে ডামি প্রার্থী রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দলীয় প্রার্থীদের সাবধান করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করতে গেলে এমন নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন
মনোনয়নপ্রত্যার্শীরা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। দলীয় হাই কমান্ডের ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী থেকে শুরু করে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন।
সন্দ্বীপ থানা আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের একটি বড় অংশের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডা. জামাল উদ্দিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন।
বুধবার নির্বাচন কমিশন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
ডা. জামাল উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ
চায়, তিনি যেন নির্বাচন করেন।
মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি সন্দ্বীপকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছেন। সারাদেশের ন্যায় সন্দ্বীপেও নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকার
বিকল্প নেই। তাই আবারও আমাদেরকে আগামি ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। জয়ের ব্যাপারে তিনি
আশাবাদ ব্যক্ত করেন দু’বারের এই সাংসদ।
অন্যদিকে ডা. জামাল উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের যে ধারা চলেছে, তা অব্যাহত রাখার লক্ষ্য নিয়েই তিনি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, জনগণের ভোটে তিনি বিজয়ী হয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে এই আসন উপহার দিতে পারবেন। অপরদিকে বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান
মিতার কড়া সমালোচনা করেন।
এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আরও ১০ জন। তারা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল কাদের মিয়া, সাবেক পৌরসভা মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু, চট্টগ্রাম
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সাবেক সাংসদ এম ওবায়দুল হকের সন্তান চট্টগ্রাম
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য সরওয়ার জাহান জামিল শামিম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমানা নাসরিন রুমু এবং
ইউছুপ আলি জীবন।
চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬৩৫ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ১৫৫ জন এবং পুরুষ ১ লাখ ৪৮০ জন। মোট ভোট
কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি।
উল্লেখ্য, আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নৌকা প্রতীক পেতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন মোট ৩
হাজার ৩৬২ জন। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের বিপরীতে তারা মনোনয়ন ফরম কেনেন। প্রতি আসনে গড়ে ১১ জন এ ফরম কিনেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তৃণমূলে পরীক্ষীত এবং জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেন।
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও
নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫
জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।