জাতীয় কবি কাজী নজরুলের সমাধির পাশে হাদির দাফনের প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই সমাহিত হবেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই বিপ্লবী শহীদ শরিফ ওসমান হাদি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শনিবার সাড়ে ১১টার দিকে হাদির কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয় এবং ইতিমধ্যে তা সম্পন্ন হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি অনলাইন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমদ।

প্রক্টর জানান, ওসমান হাদির পরিবারের অনুরোধ এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাহিত আছেন। ওই চত্বরে আরও কয়েকজন শিক্ষক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীর কবর রয়েছে। সেই স্থানেই শহিদ ওসমান হাদিকে দাফন করা হবে।’

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়।

আরও পড়ুন:  বিসিবি থেকে পদত্যাগ করলেন নাঈমুর রহমান

সরেজমিনে দেখা যায়, হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিএসসি থেকে শাহবাগগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কবর খোঁড়ার কাজ শেষ হয়েছে এবং দাফনের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। পুরো এলাকায় শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক দাবি ও আন্দোলনের মিছিলে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল শরিফ ওসমান হাদিকে। যে রাজপথে, যে ক্যাম্পাসে তিনি বারবার কণ্ঠ তুলেছিলেন আজ সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে তিনি ফিরছেন নিঃশব্দে। এবার আর স্লোগান দেবেন না তিনি; বরং নিজেই হয়ে উঠবেন স্লোগানের উৎস।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়।

আরও পড়ুন:  অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাবি বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

আজ সকালে জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে হাদির মরদেহ কঠোর নিরাপত্তায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পুনরায় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গোসল সম্পন্ন করা হয়। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা উপলক্ষে সেখানে ইতিমধ্যেই মানুষের ঢল নেমেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরশায়িত হবেন ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবির সমাধির পাশেই চিরশায়িত হবেন ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, যেখানে গত বৃহস্পতিবার তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে আজ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর ফল-মিষ্টান্ন

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জানাজার স্থানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যতীত অন্য কোনো সংগঠনের পতাকা থাকবে না। শোকাতুর পরিবার জানাজার সার্বিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

জানাজা ও দাফন ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। নিরাপত্তার খাতিরে ১০০০টি বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে মুসল্লিদের ব্যাগ বহন না করতে এবং সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন না ওড়াতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানাজা শেষে মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *