শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মন্তব্য: উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। তার নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবিতে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় রয়েছে। তালা দেয়া অবস্থায় ভবনের ভেতরে রেজিস্ট্রার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ভবনের ভেতরেই রয়েছেন।
এর আগে একই দাবিতে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর প্রশাসনিক ভবনের সামনে শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও বামপন্থী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। কর্মসূচিতে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্যের প্রতিবাদে উনার নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবি তোলেন তারা।

আজ তালা দেন শাখা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলদেশে ছাত্র ফেডারেশন, বাংলদেশে ছাত্র ইউনিয়ন ও নারী অঙ্গন।

শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী বক্তব্য। উনার কটূক্তির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক যে আসন সে আসনে উনি থাকতে পারেন না। যার কারণে উনার অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। উনার পদত্যাগ ব্যতীত আমাদের কোনো গন্তব্য নাই।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকযোদ্ধাদের যে দায় সেটা উনারা শিকার করলেও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খান সেটি পরিত্যক্ত করে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা মনে করি গণহত্যাকারীদের দায়মুক্ত করা এবং দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যেই উনি এমন মন্তব্য করেছে। তিনি ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত এখানে তালা থাকবে।’

উপ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রশাসনিক ভবনে আছি আমার দায়িত্ব পালন করছি। ভবনে তালা মারা হয়েছে আমি শুনেছি। তবে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

এ দিকে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগের দাবির ব্যাপারে জানতে চেয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কল রিসিভ করেননি তিনি। উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা এহসানুল মাহবুব নিশ্চিত করেছেন তিনি এই মুহূর্তে অফিসেই রয়েছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি ঢাকায় একটি সেমিনারে আছি। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না।’

উল্লেখ্য, এর আগে রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন,  যে সময় আমি (পাকিস্তানি বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *