নিচে এমন কিছু আমল আলোচনা করা হলো, যার বিনিময় আল্লাহ দ্বিগুণ করে দেন—
১. আত্মীয়-স্বজনকে দান করা
সাধারণ কোনো মিসকিন বা গরিবকে দান করলে শুধু সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু নিজের গরিব আত্মীয়-স্বজনকে দান করার মর্যাদা অনেক বেশি।
সুতরাং দানের ক্ষেত্রে আপন ভাই-বোন, চাচা-ফুফু বা নিকটাত্মীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ। এতে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করা যায়।
অনেকে আছেন যাঁরা কোরআন পড়তে গিয়ে তোতলামি করেন বা আটকে যান। সাবলীলভাবে পড়তে পারেন না বলে মন খারাপ করেন। অথচ তাঁদের জন্যই রয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআনে দক্ষ, সে সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং তোতলায় (অর্থাৎ পড়তে খুব কষ্ট হয়), তবু চেষ্টা চালিয়ে যায়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।
৩. আল্লাহর হক ও মালিকের হক আদায়কারী
কর্মজীবনে যাঁরা সততা বজায় রাখেন তাঁদের জন্যও রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার। যে কর্মচারী, শ্রমিক বা অধীনস্থ ব্যক্তি নিজের মালিকের অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন এবং একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত ঠিকমতো আদায় করেন, আল্লাহ তাঁর প্রতি অত্যন্ত খুশি হন।
হাদিসে এসেছে, ওই ক্রীতদাস বা কর্মচারীর জন্য দ্বিগুণ সওয়াব, যে আল্লাহর হক আদায় করেন এবং তাঁর মনিবের বা মালিকের হকও নিষ্ঠার সঙ্গে আদায় করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৫৪)
৪. আহলে কিতাবের ইসলাম গ্রহণ
পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের অনুসারী (যেমন ইহুদি বা খ্রিস্টান) কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে তিনি দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হন। হাদিসে এসেছে, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে মুমিন ব্যক্তি যে তাঁর নবীর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। তারপর নবী (সা.)-এর প্রতি ঈমান এনেছেন। তাঁর জন্য দিগুণ সওয়াব আছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০১১)
কারণ তিনি প্রথমত তাঁর নিজের নবীর (মুসা বা ঈসা আ.) ওপর ঈমান এনেছিলেন এবং দ্বিতীয়ত শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ঈমান এনেছেন। সত্যের সন্ধানে তাঁদের এই দীর্ঘ যাত্রাকে আল্লাহ দ্বিগুণ প্রতিদান দিয়ে সম্মানিত করেন।
৫. সত্য সন্ধানী বিচারক বা মুজতাহিদ
বিচারক বা আলেম যখন কোনো জটিল বিষয়ে সঠিক সমাধান বের করার জন্য ‘ইজতিহাদ’ বা গভীর গবেষণা করেন এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছান তখন তিনি দুটি সওয়াব পান। একটি তাঁর গবেষণার কষ্টের জন্য, অন্যটি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য। আর যদি ভুলও করেন, তবু তিনি চেষ্টার জন্য একটি সওয়াব পান। এটি ইসলামের জ্ঞানচর্চার প্রতি উৎসাহের প্রমাণ।
আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এই কথা বলতে শুনেছেন, কোনো বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর জন্য রয়েছে দুটি পুরস্কার। আর যদি কোনো বিচারক ইজতিহাদে ভুল করেন তাঁর জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৫৫২)
৬. নবীপত্নী ও নেককার নারীদের বিশেষ মর্যাদা
যাঁদের আল্লাহ সমাজে উচ্চ মর্যাদা বা দ্বিনি জিম্মাদারি দিয়েছেন, তাঁদের সওয়াবও আল্লাহ বাড়িয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা নবী করিম (সা.)-এর স্ত্রীদের উদ্দেশ করে কোরআনে ইরশাদ করেন, আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি অনুগত থাকবে এবং নেক আমল করবে, আমি তাকে তার প্রতিদান বা সওয়াব দুবার দেব। আর আমি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিজিক। (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩১)
এই আয়াত প্রমাণ করে যে দ্বিনের পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী নারীদের আল্লাহ বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন।
৭. ভালো কাজের সূচনা করা
সওয়াব শুধু দ্বিগুণ নয়, বরং তা হাজার গুণ বা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকার একটি চমৎকার উপায় হলো কোনো ভালো কাজের সূচনা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো ভালো প্রথা বা রীতির প্রচলন ঘটাবে, সে তার সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা সেই অনুযায়ী আমল করবে, তাদের সওয়াবও সে পাবে; অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোনো কিছুই কমানো হবে না। (সহিহ মুসলিম, হদিস : ১০১৭)
অর্থাৎ কেউ যদি কোনো দ্বিনি প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার বা জনকল্যাণমূলক কাজ শুরু করে যান, তবে তিনি নিজে আমল করে যে সওয়াব পাবেন, অন্যরা আমল করার কারণে সেই সওয়াবও তাঁর আমলনামায় যোগ হতে থাকবে। এটি আল্লাহর এক বিশাল রহমত।
কেন এই দ্বিগুণ প্রতিদান?
আমরা লক্ষ করলে দেখব, উপরোল্লিখিত প্রতিটি আমলের সঙ্গে অতিরিক্ত কষ্ট বা দ্বিমুখী দায়িত্ব জড়িত।
আত্মীয়কে দান করতে গেলে মনের সংকীর্ণতা দূর করতে হয়। কষ্ট করে কোরআন পড়তে গেলে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। চাকরি ও ইবাদত একসঙ্গে চালাতে গেলে সময়ের কোরবানি দিতে হয়।
আল্লাহ তাআলা ন্যায়বিচারক। তিনি বান্দার এই অতিরিক্ত কষ্টটুকু বিফলে যেতে দেন না। তাই তিনি তাঁর বিশেষ রহমতে এদের সওয়াব দ্বিগুণ করে দেন।
জাওয়াদ তাহের







