সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান মোদীর

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দ্বীপাক্ষিক বৈঠক শেষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান মোদী।

মোদী বলেন, পুতিন শুধু ভারতের ঘনিষ্ঠ অংশীদারই নন, আমার প্রিয় বন্ধুও বটে।

চার বছর পর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছেন পুতিন। এই সফরের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের গভীর কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আবারও সামনে উঠে এসেছে।

মোদী স্মরণ করিয়ে দেন, চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার সময় দৃঢ়ভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। মস্কো সে সময় বলেছিল, তারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের সঙ্গে ‘একমত ও সব ধরনের সন্ত্রাস নির্মূলে পাশে আছে। রাশিয়া পাকিস্তানে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পক্ষেও জোরালো সমর্থন জানিয়েছিল।

মোদী বলেন, গত আট দশকে বিশ্ব বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। নানা মানবিক সঙ্কট ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এর মধ্যেও ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট থেকেছে। পারস্পরিক সম্মান ও আস্থার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

আরও পড়ুন:  জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ : রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে আয়োজিত এই যৌথ বিবৃতিতে বাণিজ্য, অর্থনীতি ও পণ্য পরিবহন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ঘোষণাও আসে। এছাড়া একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়।

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘোষণা আসে পুতিনের কাছ থেকে। ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ’ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে দিল্লির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, তখন পুতিনের এই মন্তব্য কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মোদী যদিও এই প্রসঙ্গে সরাসরি তেলের নাম উল্লেখ করেননি, বরং পারমাণবিক ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সহযোগিতাকে সামনে আনেন। তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা ভারত-রাশিয়া অংশীদারত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বহুদিন ধরে বেসামরিক পারমাণবিক খাতের সহযোগিতা আমাদের পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করেছে। এই সহযোগিতা চলবে।

এদিকে, দুই দেশের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পণ্য পরিবহন ও কেমিক্যাল খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি বিনিময় করেন। মোদি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন:  শান্তির জন্য ইউক্রেন-রাশিয়াকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে: ট্রাম্প

পুতিন জানান, দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের ভ্রু কপালে তোলার মতো মন্তব্যও করেন তিনি। বলেন, ভারত ও রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক লেনদেনে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এই বিষয়টি ডলারনির্ভর ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

আলোচনায় জায়গা পায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও, যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা ‘মধ্যস্থতার উদ্যোগ’ সত্ত্বেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই।

পুতিন বলেন, যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টা তিনি গভীরভাবে মূল্যায়ন করেন। দিল্লিতে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতের বৈঠকে এ বিষয়ে তাদের ‘খুব তথ্যসমৃদ্ধ ও কার্যকর’ আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যুদ্ধ শেষ করতে তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বিস্তারিত মোদীকে জানিয়েছেন এবং ভারত আবারও ‘শান্তির পক্ষে চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

আরও পড়ুন:  কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

শেষে মোদী তুলে ধরেন জ্বালানি খাতে দুই দেশের সহযোগিতার গুরুত্ব। তিনি জানান, এ সহযোগিতা শুধু বজায়ই থাকবে না, বরং গুরুত্বপূর্ণ খনিজসহ নতুন ক্ষেত্রেও তারা কাজ বাড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *