খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি হয়নি, তবে স্থিতিশীল আছে

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তিন দিন ধরে একই পর্যায়ে রয়েছে। দল ও পরিবারের সদস্যরা আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি সেই ধকল সামলানোর মতো অবস্থায় নেই। মেডিকেল বোর্ড অনুমোদন দিলে দ্রুত তাঁকে বিদেশে নেওয়া হবে। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া সেভাবে সাড়া দিচ্ছিলেন না। তিন দিন পর গতকাল শনিবার তিনি দুয়েকটি কথা বলেছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া এক ধরনের গুরুতর শারীরিক পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। ধারাবাহিকভাবে তাঁর কিডনির ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। এর একটি গতকাল রাত ১০টার দিকে শেষ হয়েছে। এতে তাঁর অবস্থার উন্নতি না হলেও স্থিতিশীলতা এসেছে।

২৩ নভেম্বর তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার গভীর রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি শুরু হয়। তিনি কয়েক বছর ধরে এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর শরীর ক্রিয়াশীল আছে। হাত-পা কিছুটা নাড়াচাড়া করতে পারছেন। দুয়েকটি কথাও বলেছেন গতকাল।

পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার আলোচনা আছে। গতকাল বিকেলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে ভিসা, সম্ভাব্য একাধিক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ঠিক করা নিয়ে আলোচনা ও কাজ চলছে। যদি প্রয়োজন হয় এবং তিনি বিমানে যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত হন; তাহলে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:  দক্ষিণ কোরিয়াকে সতর্ক করলেন পুতিন

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থাতেই আছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চলছে। বিদেশের মধ্যে আমেরিকার জনস হপকিনস এবং লন্ডনের লন্ডন ক্লিনিকের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসায় যুক্ত আছেন।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার চীনের একটি চিকিৎসক দল ঢাকায় আসতে পারে। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সেবা ও পরামর্শ দেবেন।

মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়ার হৃৎপিণ্ডেও কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়ের তীব্র প্রদাহে আক্রান্ত হওয়ায় অবস্থা জটিল হয়েছে।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যায় অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন সমকালকে বলেন, তিনি স্থিতিশীল (স্টেবল) থাকলেও শঙ্কামুক্ত নন। তবে গত শুক্রবার রাতের তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন। অক্সিজেন লেভেল কিছুটা কম রয়েছে।

গতকাল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা জানান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালের, চিকিৎসাকর্মীর, স্বাস্থ্যকর্মীর। সারা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো যে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেটি এখানে করার আয়োজন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:  জুলাই সনদের ৫ নম্বর দফা সংশোধনের প্রস্তাব সালাহউদ্দিন আহমদের

বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ওনার অবস্থা গত তিন দিন ধরে একই পর্যায়ে আছে।

জাহিদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে তদারক করছেন। তিনি সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ফুসফুসে সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর পর দেখা দেয় নিউমোনিয়া। তাঁর কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল। ফলে একটির চিকিৎসা দিতে গেলে আরেকটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, তারা যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচ্ছেন। তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা সমন্বিত উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডন কিংবা সিঙ্গাপুর নিতে আগ্রহী। চীনের তরফ থেকেও তাঁকে সে দেশে নেওয়ারও প্রস্তাব রয়েছে। পরিবার ও দলের তরফ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কুয়েত ও সিঙ্গাপুরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা এবং মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন গতকাল ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেই তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে পরিবারের। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাতার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ কলরেকর্ড ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ

হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেতাকর্মী ভিড় করছেন। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। বিএনপির পক্ষ থেকে হাসপাতাল এলাকায় নেতাকর্মীদের জড়ো না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, আপনারা কেউ দয়া করে হাসপাতালে ভিড় করবেন না। সময়মতো আপনাদের তাঁর সম্পর্কে জানানো হবে। দয়া করে কেউ সেখানে উপস্থিত হবেন না। এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন।

আরোগ্য কামনায় দোয়া মিলাদ 
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় গতকাল শনিবার সারাদেশে দোয়া মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের কর্মসূচির বাইরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও দোয়া পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভিড় করেন বিএনপি, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনা করে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুস্থতা কামনা করে পোস্ট লিখেছেন, স্মৃতিচারণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *