জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার কথা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কারণ হিসেবে দলটি বলেছে, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কোনো আইনি ভিত্তি নেই এবং এটি একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াঁজো প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব।
দলের হয়ে বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আইনী ভিত্তি অর্জন হবে না। এটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা। আমরা বহুবার আইনী ভিত্তির কথা বলেছি। তাই আইনী ভিত্তির পূর্বে এই ধরনের আনুষ্ঠানিকতা “জুলাই ঘোষণাপত্রের” মতো আরেকটি একপাক্ষিক দলিলে রুপান্তর হবে।’
তবে দলটি আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বৃদ্ধি করেছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো। দাবি পূরণ হলে পরবর্তীতে স্বাক্ষর করবে এনসিপি।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য তিনটি শর্তের কথা জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তাদের ৩ শর্ত হলো—
১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ ও গণভোটের প্রশ্ন চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।
২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জারি করবেন।
৩. গণভোটে জনগণ যদি জুলাই সনদের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত ‘Constituent Power’ (কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার) বলে সংবিধান সংস্কার করবে, যার নাম হবে ‘বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬’।
এ ব্যাপারে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আইনগত ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করতে পারি না। সেটা হবে মূল্যহীন। পরবর্তী সরকার এলে কী টেক্সট থাকবে বা কীভাবে কার্যকর হবে—সে নিশ্চয়তা আমরা চাই। তা না হলে জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বা সংশ্লিষ্ট আয়োজনে আমরা অংশ নেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। এই আদেশ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন। খসড়া আদেশে আমাদের ঐকমত্য হতে হবে, তারপরই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।’
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে সিপিবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানায় বাম ধারার চারটি দল।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং প্রক্লেমেশন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তাই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কালকেই [১৭ অক্টোবর] সব দলের স্বাক্ষর নিতে পারলে ভালো হবে। তবে যদি কোনো দল পরে স্বাক্ষর করতে চায়, তাহলে এই প্রক্রিয়ার শরীক দল হিসেবে সেই সুযোগ থাকবে। কিন্তু আগামীকাল আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাক্ষর গ্রহণ করতে চাই। এটি অনেক প্রাণের মূল্যের বিনিময়ে এসেছে।’
উল্লেখ্য, ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে আজ শুক্রবার। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকাল চারটায় এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।







