উত্তরের তিন জেলায় রোববার হঠাৎ ঝড়ে এক হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। এ উপজেলার সাত শতাধিক বাড়ি ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে; আহত হয়েছেন তিনজন।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে আকস্মিক ঝড়ে দুটি গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; আহত হয়েছেন আটজন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জেও ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে শতাধিক বাড়ি। সেখানে প্রায় ৪০টি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
এদিকে দেশের ভেতরে এবং উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) জানিয়েছে, আজ সোমবারের মধ্যে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে এসব জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করলে তীরবর্তী লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বন্যা দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া রোববার প্রকাশিত পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
গঙ্গাচড়ায় বিধ্বস্ত সাত শতাধিক বাড়ি
গঙ্গাচড়ায় রোববার সকালে বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে টিনশেড ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়ে। অল্প সময়ের এই ঝড়ে দুই ইউনিয়নের (আলমবিদিতর ও নোহালী) সাত শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এ ছাড়া আগাম আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান চয়ন জানান, ওই ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী বলেন, এ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
কালীগঞ্জে দেড় শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ঝড়ের লন্ডভন্ড হয়েছে দুটি গ্রামের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আটজন। রোববার সকালে ভোটমারী ইউনিয়নের শ্রুতিধর ও চর নোহালী এলাকায় ঝড় আঘাত হানে। এতে দুই গ্রামের দেড় শতাধিক টিনশেড, আধাপাকা ও কাচা ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়। উপড়ে পড়ে বেশ কিছু বড় বড় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। এতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন দুই গ্রামের মানুষ।
৪০ পরিবার খোলা আকাশের নিচে
রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম বানিয়াপাড়া গ্রামে ১৫ মিনিটের ঝড়ে শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে যায়। এরপর থেকে ৪০টি পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ঝড়ে ধান, কলা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু দোকান। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম।
নওগাঁয় বিপর্যস্ত জনজীবন
শনিবার বিকেলের আকস্মিক ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর, বদলগাছি ও সদর উপজেলা। এক দিন পরও অনেক গ্রামের ঘরে টিন ওঠেনি, বিদ্যুৎ ফেরেনি, ফসলের মাঠে পড়ে আছে ভাঙা কলাগাছ আর গাছের ডালপালা। অনেকেই ঘরের জিনিস নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঝড়ে নওগাঁর প্রায় ১৪০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল।







