নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিজয়ীদের সঙ্গে তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান বেশ কয়েক হাজারের। ডাকসুর ভিপি পদে জয়লাভ করা সাদিক কায়েমের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের ভোটের ব্যবধান ৯ হাজারেরও বেশি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনা থেকে মাঠ পর্যায়ের সব নেতৃত্বে শিবিরই ছিল, এমন ন্যারেটিভই ডাকসু নির্বাচনে তাদের জয়লাভের অন্যতম একটি কারণ।
বিশ্লেষকরা এ-ও বলছেন, অন্য ছাত্রসংগঠনের ‘পদ-পদবি নিয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থেকেও নিজেদের সংগঠনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের অনেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, গত এক বছরে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের যে ন্যারেটিভ দাঁড় করানো হয়েছে, তা ভোটারদের প্রভাবিত করেছে।
অধ্যাপক নাসরীন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মালিকানা নিয়ে যে বাহাস ছিল, সেখানে শিবির বলেছে, গণ-অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনা থেকে আন্দোলনের নেতৃত্বের সব কিছুতে যেমন প্রোফাইল লাল করা, এক দফার দাবি, স্লোগান সব কিছুর মূলে ছিল তারা। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা তখন পরিচয় সামনে আনেনি
১৯৮৯-৯০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন মুশতাক হোসেন। সেই সময় ছাত্রশিবিরও নির্বাচন করেছিল বলে জানান তিনি। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সম্ভবত তাদের একটা চান্স দিতে চাচ্ছে’ বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে র্যাডিকেল ইসলামিস্ট শক্তি যে ভূমিকাটা নিয়েছে, সেটা না হলে শেখ হাসিনার শক্তিশালী শাসনের হাত থেকে মুক্ত হওয়া যেতে না। এটি সিমপ্যাথি হিসেবে হয়তো কাজ করেছে বলে আমার মনে হয়।’
তবে শিবিরও যদি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী পথে যায় তবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ সংঘটিত হতে বেশি সময় লাগবে না বলে মন্তব্য করেন ডাকসুর সাবেক এই জিএস।
কিন্তু এই দলটির রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক’ ধারার রাজনীতি যায় কি না সে প্রশ্নও রয়েছে তার।
গণ-অভ্যুত্থানের পর আত্মপ্রকাশ
বিশ্লেষকরা জানান, ঢাবিতে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পরিবেশ পরিষদ গঠিত হয়েছিল। ওই দশকেই পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে শিবির ও ছাত্রসমাজ নিষিদ্ধ হয়।
ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতা হোসেন জানান, পরবর্তীতে সীমিত আকারে ছাত্ররাজনীতি চালিয়ে যায় ছাত্রশিবির। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবি যখন থেকে জোরালো হয়, তখন থেকেই তারা গোপনে রাজনীতি চালাতে শুরু করে।
মুশতাক হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে শিবিরের সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের কতগুলো সংঘর্ষ হয়েছে। তারা এই বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে ছাত্রদের মুখোমুখি হয়। তখন থেকেই শিবিরের বিরুদ্ধে একটা অচ্ছুত নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনেই তাদের নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।’
ছাত্রশিবিরের কোনো কোনো নেতা ছাত্রলীগের পদ-পদবি নিয়ে নিজেদের সংগঠিত করার পুরো সুবিধা ভোগ করেছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর গতবছরের সেপ্টেম্বরে এস এম ফরহাদ শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি হিসেবে নিজের পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পরিচয় নিয়ে নানা আলোচনা আছে। অভিযোগ ওঠে ফরহাদ জসিমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। হল ছাত্রলীগের সমাবেশে তার উপস্থিতির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও ছাত্রশিবির এ বক্তব্য মানতে রাজি নয়।






