মায়াবী দ্বীপ: কাপ্তাই হ্রদের বুকে এক নির্মল নির্জনতার নাম

রাঙামাটির ফিশারি ঘাট থেকে শুরু হওয়া এক ভিন্নধর্মী ভ্রমণ অভিজ্ঞতা যেন ধরা দেয় স্বপ্নের মতো। ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় কাপ্তাই হ্রদের বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া একাধারে রোমাঞ্চকর, অন্যদিকে প্রশান্তির।

জলরাশির ছলছল শব্দ আর ইঞ্জিনের হালকা গর্জন মিলে এক অদ্ভুত সঙ্গীত সৃষ্টি করে। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের এই নৌযাত্রায় বিকেলের নরম আলোয় পৌঁছে যাই কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে অবস্থিত এক অপরূপ দ্বীপে— মায়াবী দ্বীপে

এই দ্বীপে পা দিয়েই প্রকৃতির রহস্যময় জগতে ঢুকে পড়ার অনুভূতি হয়। চারদিকে সবুজের সমারোহ, দূরে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে রঙিন আলো ফেলে রেখেছে পাহাড়ের গায়ে, আর আকাশজুড়ে ছায়া-মেঘ-রোদের মিশেল যেন প্রকৃতির আঁকা এক জীবন্ত ক্যানভাস। দূরের পাহাড়ে রোদ, আবার কিছুটা দূরে বৃষ্টি ঝরে পড়ে—এমন বৈচিত্র্যময় দৃশ্য একই ফ্রেমে ধরা দেয় এখানে।

জুমঘরের বারান্দায় বসে, হ্রদের বিশাল জলরাশি আর সবুজ পাহাড়ের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি। দ্বীপের মাঝখানে খোলা মাঠ, তাতে মখমলের মতো ঘাস, ছায়াদানকারী কয়েকটি গাছ আর তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কটেজ—ঘুম অপ্সরি, জুমঘর ইত্যাদি। বেঞ্চে বসে কিংবা দোলনায় দুলে আপনি চাইলে অনায়াসে জীবন থেকে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন। এখানে আছে প্রাকৃতিক সুইমিংপুলের মতো জায়গাও, যা দ্বীপটিকে করে তুলেছে ষোলো আনার এক পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক রত্ন।

আরও পড়ুন:  দেশে ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হতে পারে

দ্বীপটিকে পাখির চোখে দেখলে মনে হয়, এটি যেন এক প্রজাপতির মতো দুই ডানায় বিভক্ত। মূল দ্বীপ থেকে ছড়িয়ে পড়া সরু দুটি অংশ যেন প্রকৃতির নান্দনিক কারুকাজ। সন্ধ্যার পর দ্বীপে নামে নিস্তব্ধতা। হ্রদের পাড়ে বসে থাকা, ঢেউয়ের ধাক্কা, দূরের দ্বীপগুলোতে জ্বলজ্বলে আলো—সব মিলিয়ে এক রহস্যময় পরিবেশ।

রাতের খাবার সেরে জুমঘরের বারান্দায় আধো আলো আধো অন্ধকারে শুয়ে থাকা এক অন্যরকম অনুভূতি। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গেলেও সময় যেন থেমে থাকে। রাত পার করে ভোরের দিকে বের হয়ে দেখি, দূরের পাহাড়ের আড়াল থেকে লালচে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। সেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে—অভূতপূর্ব এক সৌন্দর্য।

দ্বীপে কাটানো সময় এতটাই স্বল্প মনে হয় যে, যেন কিছুক্ষণ আগেই এলাম। অথচ বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসে। আফসোস থেকে যায়—বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ হয়নি। সকালে নতুন পর্যটকদের পদচারণা দেখে বোঝা যায়, দ্বীপটি কেবল আমাকে নয়, আরও অনেককেই মুগ্ধ করছে প্রতিদিন।

আরও পড়ুন:  নুসরাত ফারিয়া কাশিমপুর কারাগারে

তরুণ-তরুণীদের দল উচ্ছ্বাস নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে, একে অপরকে দেখাচ্ছে মায়াবী দ্বীপের সৌন্দর্য। প্রকৃতির সঙ্গে এমন একাত্ম হওয়ার মুহূর্ত খুব কমই আসে জীবনে। দ্বীপটি যেন প্রতিদিন নতুন রূপে ধরা দেয়, আজ আমাকে মুগ্ধ করলো, কাল করবে আপনাকে।

ফেরার সময় ইঞ্জিন নৌকার শব্দ আর পানির ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি যেন বিদায়ের সুর বাজায়। চোখের সামনে দ্বীপটি ছোট হতে হতে একসময় অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার নাগরিক জীবনের কোলাহল, ব্যস্ততা—সব কিছু যেন এক নতুন বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়।

কিন্তু মনে গেঁথে থাকে মায়াবী দ্বীপের সেই অপূর্ব দৃশ্য, শান্ত পরিবেশ আর কিছুটা না ভেজা বৃষ্টির আফসোস। জীবনের গতি যতই দ্রুত হোক, মাঝে মাঝে এমন একটি মায়াবী বিরতি প্রয়োজন, যা মনকে রিচার্জ করে নতুন করে পথচলায় সাহস যোগায়।

আরও পড়ুন:  আমি কিন্তু একেবারে সিঙ্গেল: ইধিকা

মায়াবী দ্বীপ তাই শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়, বরং এটি এক ধরণের অভিজ্ঞতা—প্রকৃতির কোলে নিজের সঙ্গে নিজের দেখা হওয়ার মুহূর্ত।

#এফএফ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *