চিলেকোঠার আগন্তুক পর্ব: ১

আমেনা বেগম 
বৈশাখের পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ মেঘের গর্জনে আচমকা চমকে উঠল লাবণ্য। ঘুমের রেশ এখনো চোখের কোণদ্বয়ে লেগে আছে। তবুও কাল বৈশাখের রুদ্ররূপ দেখে সে মা মা করে চিৎকার দিয়ে উঠল। কিছুক্ষণ ডেকে যখন কারো সাড়া পেল না তখন লাবণ্য বলতে লাগল, গেল কোথায় সবাই? গবাক্ষের কপাট বেয়ে উত্তাল বাতাসে তার এলোমেলো চুল ওড়ে পর্দার মত ঢেউ খেলিয়ে। লাবণ্য ভীত হয়ে কিছুটা জড়োসড়ো হয়ে রয়েছে। এমন সময় দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করল চৈতালি। কিরে তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? আর ঐদিকে চেয়ে দেখ আকাশটা কেমন তিমিরে ঢেকে গেল। দেখ জানালার ফাঁক দিয়ে। চৈতালির কথা শোনে লাবণ্য তাকাল বাতায়নের পর্দা ফাঁক করে আর সেই মুহূর্তে অঝোরে বৃষ্টির ফোঁটায় লাবণ্যের ঘুমন্ত মুখে পানির ফোঁয়ারায় নিদ্রাদেবী পালিয়ে গেল। সে(লাবণ্য) বলে ওঠল, চৈতালি আপু আম্মু কোথায়? আমি কখন থেকে ডেকে ডেকে হয়রান হচ্ছি অথচ তোমাদের কারো দেখা পাচ্ছি না। ব্যাপার কী?
আরেহ লাবণ্য আম্মুতো পিঁয়াজু আর পাকড়া বানাচ্ছে কিচেনে।সাথে গরম গরম চা।এই মেঘে ঢাকা আসন্ন সন্ধ্যা জমে যাবে চায়ের রেশে। চল চল দ্রুত নিচে যাই। আম্মু আমাকে বলেছে তোকে ঘুম থেকে তুলে আনতে। আমি যাচ্ছি লাবণ্য। তুই তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে আয়। এই বলে চৈতালি চলে গেল।
গুরু গুরু গর্জনে অপরাহ্ন যেন ফেটে পড়ছে বজ্রপাতের মতো। হঠাৎ করে বিজলির রুপালি আলোয় লাবণ্যের বদনখানি উজ্জ্বল রুপে ফুটে ওঠেছে। সে দুই হাতে চুলে খোঁপা করে একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিচে নেমে গেল। ঝড়ের তাণ্ডবে হিমেল শীত এসে বাসা বেঁধেছে। কিচেনে হাঁড়ি পাতিলের শব্দ আর গরম তেলে পাকড়া ভাজার শব্দে কেমন অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে লাবণ্যের।
এখন আসার সময় হয়েছে সাহেবজাদী। মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কথা বলতে লাগলেন রুনা খান। কি ভাবছেন? নামের শেষে খান আবার গৃহিণীর মত ঘরের কাজ করেন? কাজের মহিলা নাই কেন? আসলে রুনা খান মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হলেও বিয়ে করে এসেছেন একজন ব্যবসায়ীর ঘরে। স্বামী শোয়েব খানের পদবী এখন তিনি ব্যবহার করেন। তবে বাসার কাজ কাজের মেয়েদের দিয়ে করানোর চেয়ে নিজে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। রুনা খান বিকেলের নাস্তা সাজিয়ে টেবিলে দিলেন আর চৈতালি, লাবণ্য খেতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর রুনা খানও বসলেন। চায়ের আড্ডায় জীবনের গল্প ভেসে যাচ্ছে কথার ফুলঝুরিতে। বৃষ্টি এখন কিছুটা থেমে গেছে। কলিং বেলে ক্রিং ক্রিং করে বাজতে শুরু করল। লাবণ্য দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
চলবে… 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *