ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে ভারত। দেশটি এই হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে। এবার এই হামলা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ার বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর এনডিটিভির। 

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) মোদি বলেছেন, ভারত প্রত্যেক সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের চিহ্নিত করবে, তাদের খুঁজে বের করবে এবং শাস্তি দেবে।

তিনি বলেছেন, আমাদের মনোবল কখনও ভেঙে যাবে না। বিহারের মধুবানিতে সরকারি এক অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন মোদি।

তিনি বলেছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসীরা যে নির্মমভাবে নিরীহ পর্যটকদের হত্যা করেছে, তাতে সমগ্র দেশ বেদনার্ত। পুরো দেশ শোকাহত পরিবারের পাশে আছে। সরকার আহতদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন:  ঢাকায় এসে নিখোঁজ সুবাকে দেখা গেল ক্যামেরায়

যেসব সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এবং যারা এর পরিকল্পনা করেছে তারা এমন শাস্তি পাবে যে কল্পনাও করতে পারবে না। সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থলে যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা ধ্বংস করার সময় এসেছে, বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে গতকাল বুধবার ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বোচ্চ কমিটি- ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিওরিটি বা সিসিএস বৈঠকে বসে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, বৈঠকে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সীমান্ত পারের যোগসাজস তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন হওয়ার পরেই এই আক্রমণ হলো। এমন একটা সময়ে হামলা হলো যখন সেখানে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

বুধবার রাতে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে মিশ্রি ঘোষণা করেন, সন্ত্রাসী হামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে নিচের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে:

আরও পড়ুন:  অবশেষে সাক্ষাৎ হচ্ছে ইউনূস-মোদির

১. ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং পাকাপাকিভাবে সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে।

২. (পাঞ্জাবে অবস্থিত) সমন্বিত আটারি চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ওই পথ দিয়ে যারা বৈধভাবে পারাপার করেছেন তারা পয়লা মে-র আগেই ফিরতে পারবেন।

৩. সার্ক দেশগুলোর জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্প’-এর অধীন বিশেষ ভিসা নিয়ে পাকিস্তানের নাগরিকরা ভারতে ভ্রমণ করতে পারবেন না। যে পাকিস্তানি নাগরিকদের আগেই ওই ভিসা দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হলো। ওই বিশেষ ভিসা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতে রয়েছেন যে পাকিস্তানের নাগরিকরা, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

৪. দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে সেদেশের প্রতিরক্ষা, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর যে ‘পরামর্শদাতারা’ রয়েছেন, তাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’, (অর্থাৎ অবাঞ্ছিত) বলে ঘোষণা করছে ভারত। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

আরও পড়ুন:  এইচএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ

ভারতও ইসলামাবাদে তাদের দূতাবাস থেকে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর পরামর্শদাতাদের ফিরিয়ে আনবে। দুই দেশের দূতাবাসগুলোতে এই পদগুলো বিলুপ্ত করা হলো। দুই দেশের দূতাবাসেরই সামরিক পরামর্শদাতাদের পাঁচজন করে কর্মীকেও নিজের দেশে চলে যেতে হবে।

৫. দুই দেশের রাজধানীতে অবস্থিত কর্মী সংখ্যা বর্তমানের ৫৫ থেকে কমিয়ে পয়লা মের মধ্যে ৩০ এ নিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *