দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদে নামল বেসরকারি মহাকাশযান

বেসরকারি সংস্থার তৈরি মার্কিন মহাকাশযান সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করেছে। দীর্ঘ যাত্রার পর ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের তৈরি ব্লু ঘোস্ট মিশন-১ রবিবার চাঁদের উত্তর-পূর্ব দিকের কাছাকাছি মেয়ার ক্রিসিয়াম এলাকার কাছে মনস ল্যাটরেইল নামের স্থানে অবতরণ করে।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁদে বেসরকারি কোনো মহাকাশযান সফলভাবে অবতরণ করল। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা হিউস্টনের ইনটুইটিভ মেশিন নির্মিত ওডিসিয়াস রোবট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মালাপের্ট নামের চন্দ্রখাতের কাছে অবতরণ করে।

তবে ওডিসিয়াস কাত হয়ে অবতরণ করলেও ব্লু ঘোস্ট সোজাভাবেই অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।মহাকাশযানটি ‘স্থিতিশীল ও সোজা’ভাবে অবতরণ করেছে বলে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের প্রধান নির্বাহী জেসন কিম নিশ্চিত করেছেন। অবতরণের পর নাসার বিজ্ঞান মিশন অধিদপ্তরের সহযোগী প্রশাসক নিকি ফক্স উচ্ছ্বসিতভাবে বলেন, ‘আমরা চাঁদে পৌঁছে গেছি!’

এ ছাড়া অবতরণের পর পাঠানো প্রথম ছবিতে দেখা গেছে, পাথুরে ও ক্ষতবিক্ষত ভূখণ্ড, যেখানে ব্লু ঘোস্টকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেভিগেট করতে হয়েছে চূড়ান্ত অবতরণের সময়। ওই সময় এটিকে কয়েক হাজার মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ থেকে মাত্র দুই মাইল প্রতি ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়।

৯৫ বছর বয়সী অ্যাপোলো-১১ মহাকাশচারী বাজ অলড্রিন বাসা থেকে এই সাফল্য উদযাপন করেন। তিনি এক্সে শুভেচ্ছা বার্তা পোস্ট করেন এবং পায়জামা পরা একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে তাকে হাসিমুখে লাইভ সম্প্রচারে থামস আপ দেখাতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন:  গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে হাজির এবার যুক্তরাষ্ট্র

নাসার গবেষণা
এই অভিযানটির ডাকনাম দেওয়া হচ্ছে ‘ঘোস্ট রাইডারস ইন দ্য স্কাই’ নামে। এই অভিযানটি নাসা-শিল্প অংশীদারির অংশ, যার লক্ষ্য আর্টেমিস মিশনের ব্যয় হ্রাস করা।

চাঁদের বুকে আবারও মানুষ অবতরণের লক্ষ্যে আর্টেমিস মিশন পরিচালনা করছে নাসা।সোনালি রঙের মহাকাশযান ব্লু ঘোস্ট আকারে একটা জলহস্তির সমান। স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের সহায়তায় গত ১৫ জানুয়ারি এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। চলার পথে পৃথিবী ও চাঁদের চমকে দেওয়ার মতো বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করেছে মহাকাশযানটি। ব্লু ঘোস্ট ১০টি যন্ত্র বহন করছে।

এর মধ্যে দুটি হলো, চাঁদের মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার যন্ত্র ও তেজস্ক্রিয়তা সহনীয় একটি কম্পিউটার।চাঁদের পূর্ণ এক দিন (পৃথিবীর ১৪ দিন) কাজ চালানোর উপযোগী করে ব্লু ঘোস্ট মিশনকে সাজানো হয়েছে। আগামী ১৬ মার্চ ব্লু ঘোস্ট চাঁদ থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য ধারণ করবে।

এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানি ‘ইনটুইটিভ মেশিনস’। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ মিশনের পর চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর প্রথম ঘটনাও ছিল এটি। যদিও একটি দুর্ঘটনার কারণে ইনটুইটিভ মেশিনসের সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। অবতরণের সময় ল্যান্ডারটি খুব দ্রুত নেমে আসায় গতির কারণে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। যার ফলে ল্যান্ডারটি পর্যাপ্ত সৌরশক্তি উৎপাদন করতে পারেনি। এ কারণে ওই অভিযানটি সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তবে ইনটুইটিভ মেশিনস অবশ্য থেমে নেই। নতুন অভিযান শুরু করেছে তারা।

আরও পড়ুন:  মোদির স্ট্যাটাস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে বাংলাদেশ

আরো একটি ল্যান্ডার আসছে
এদিকে ইনটুইটিভ মেশিনসের তৈরি অ্যাথেনা নামের ষড়ভুজাকৃতির ল্যান্ডারটিতে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা যোগ করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। এবারের ল্যান্ডারটি ব্লু ঘোস্টের চেয়ে লম্বা ও হালকা। এর উচ্চতা প্রাপ্তবয়স্ক জিরাফের উচ্চতার কাছাকাছি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনিটে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেট থেকে অ্যাথেনা ল্যান্ডারটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা টেলিযোগাযোগ সংস্থা নোকিয়ার সহযোগিতায় এই ল্যান্ডার উৎক্ষেপণ করে।
সব ঠিক থাকলে এটি ৬ মার্চের দিকে চাঁদের বিশাল মনস মাউটন মালভূমিতে অবতরণ করবে।

নাসার এই অভিযানের জন্য নোকিয়া কম্পানির নোকিয়া বেল ল্যাবস চাঁদের জন্য প্রথম সেলুলার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা মহাকাশচারীদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য কাজ করবে। এর মাধ্যমে মহাকাশচারীরা শুধু ভয়েসই নয়, ইন্টারনেট পরিষেবাও ব্যবহার করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:  চীনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহতের শঙ্কা

চাঁদে অবতরণ করা অত্যন্ত জটিল। কারণ সেখানে বায়ুমণ্ডল না থাকায় প্যারাশুট কাজ করে না। তাই মহাকাশযানগুলোকে নির্ভুলভাবে নিয়ন্ত্রিত থ্রাস্টার জ্বালিয়ে ধীরে অবতরণ করতে হয়, যাতে দুর্গম ভূখণ্ড এড়িয়ে যাওয়া যায়।

ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রথম মিশনের আগ পর্যন্ত শুধু পাঁচটি জাতীয় মহাকাশ সংস্থা চাঁদে সফল অবতরণ করেছিল—সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও জাপান।

এই মিশনগুলো এমন এক সময় হচ্ছে, যখন নাসা তাদের আর্টেমিস কর্মসূচি কমিয়ে আনার বা বাতিল করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে, যাতে মঙ্গল গ্রহের অনুসন্ধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়—যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের অন্যতম মূল লক্ষ্য।

সূত্র : এএফপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *