চীনা গাড়ির দখলে যাচ্ছে বিশ্ব, উদ্বেগ পশ্চিমা নির্মাতাদের

চীন বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি ভলিউমের দিক থেকে এরই মধ্যে টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে। চীনে এক সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোর ব্যাপক আধিপত্য ও প্রতিযোগিতা ছিল কিন্তু এখন সেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে বিওয়াইডি। শুধু বিওয়াইডি নয় চীনের অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি যেমন চেরি, গিলি ও সাইক তাদের দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করেছে।

গার্টনার কনসালটেন্সির পেদ্রো পাচেকো বলেন, চীনের গাড়ি নির্মাতারা এখন বিশ্বব্যাপী গাড়ি শিল্পের শীর্ষে থাকা ভক্সওয়াগেন ও টয়োটাকে হটিয়ে দিতে চায়। রপ্তানি আরও সম্প্রসারণ তাদের মূল লক্ষ্য।

সিটিগ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চীন থেকে বিদেশে ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন গাড়ি রপ্তানি করা হয়েছে, যা তিন বছর আগের তুলনায় তিনগুণ বেশি। বলা হচ্ছে, এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে ও ২০৩০ সালে এই রপ্তানি করা গাড়ির সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন।

আরও পড়ুন:  আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ছাড়-রিজার্ভ সাড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার

ফলে বর্তমান গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে অনেক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ইউরোপীয় রাস্তায় চীনা তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ক্রমবর্ধমান সংখ্যার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও চীনের গাড়ি রপ্তানির অধিকাংশই অভ্যন্তরীণ-দহন ইঞ্জিন (আইসিই) দ্বারা চালিত হয়। তাছাড়া এসব গাড়ির গন্তব্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পশ্চিম ইউরোপ বা আমেরিকা নয়, বরং বিশ্বের বাকি অংশের দিকে।

একসময় চীনা গ্রাহকরা বেশিরভাগ বিদেশি ব্র্যান্ড বেছে নিতো, কিন্তু আজকাল দেশীয় গাড়ি নির্মাতারা অভ্যন্তরীণ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রায় তিন-পঞ্চমাংশ অবদান রাখছে। তার মানে হলো চীনের কোম্পানিগুলো শুধু নিজেদের বাজারেরই নিয়ন্ত্রণে নেয়নি। বিশ্ব বাজারও এখন তাদের দখলের পথে।

তাদের এই উত্থানের অন্যতম কারণ হলো মূল্য। ভর্তুকি এবং অন্যান্য সরকারি প্রণোদনা ব্যবহার করায় কোম্পানিগুলোর গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বড় সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। চীনা কারখানাগুলো সম্ভবত বছরে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন গাড়ি তৈরি করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী বিক্রির প্রায় অর্ধেকের সমান।

আরও পড়ুন:  পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে চীনা সরকার কোম্পানিগুলোকে নানা ধরনের সুবিধা দিলেও কিছু বিষয় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ইইউ চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করেছে।

পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান শ্মিট অটোমোটিভ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে চীনের ইভি রপ্তানি ২০২১ সালের ৪ শতাংশ বাড়ে। কিন্তু ২০২৪ সালে তা বেড়ে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু ইউরোপের বর্তমানত শুল্ক নীতির কারণে তা ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়তে পারে মাত্র ১১ শতাংশ। তাছাড়া সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের গাড়ির আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে গেছেন। তাছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীনের পণ্য আমদানির ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।

অন্যদিকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া নিজস্ব ব্র্যান্ডের আধিপত্য রয়েছে। ভারতের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক ভালো নয়। তাই এ সব দেশে কোনঠাসা হতে পারে চীনের ব্র্যান্ডগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *