বিচার তাৎক্ষণিক করতে গেলে অবিচার হয়ে যায় : প্রধান উপদেষ্টা

বিচার তাৎক্ষণিক করতে গেলে অবিচার হয়ে যায় বলে মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিচারের মূল জিনিসটা হলো সুবিচার হতে হবে, অবিচার যেন না হয়।

দেশে যেন কোনো সহিংসতা ও হানাহানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতের মধ্যে আর্থিক চেক হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবসময় ভাবি যাদের কারণে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বলার সাহস করছি তাঁদের এই ত্যাগ কোনো নিক্তি দিয়ে মাপা যাবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের ইতিহাসের স্রষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবন্ত ইতিহাস। মনের গভীর থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যে জাতি ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারে না সে জাতি, জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে না। এই স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন:  পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় পড়তে শুরু করেছেন আদালত
শহিদ পরিবার ও আহতদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের অংশ হলেন। এটা হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এর বাইরেও আপনাদের দায়িত্ব সমাজের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।’

সকল হত্যাকাণ্ড ও গুম-খুনের বিচার হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায়।

বিচারের মূল জিনিসটা হলো সুবিচার হতে হবে, অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই এই সংগ্রাম হয়েছে, এই আত্মত্যাগ হয়েছে। আমরা যদি অবিচারে নামি তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে তফাৎটা থাকল কোথায়? আমরা অবিচারে নামবো না। আমরা যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে, আইনের হাতে সোপর্দ করবো। যারা অপরাধী নয়, পুলিশের হাতে দেওয়ার মতো নয় তাদের মানুষ করবো।
তিনি আরো বলেন, ‘ভাই, এদেশ আমরা একসাথে গড়ি, যেদেশ আমরা একসাথে গড়ার স্বপ্ন দেখছি, তোমরাও সে স্বপ্ন দেখ। এদেশ আমার একার না, তোমারও। তুমি এদেশের সন্তান। আমিও এদেশের সন্তান। তুমি আমাকে বহু কষ্ট দিয়েছো। আমি তোমারে কষ্ট দেব না। আমরা এক যোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাবো, যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয় তাদের সৎ পথে নিয়ে আসতে হবে।’

আরও পড়ুন:  নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন ড. ইউনূস

বৈঠকে আহত ও শহিদ পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, আপনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারব। আমাদের আন্তরিকতার কমতি ছিল না। প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, সে কারণে আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যথাসময়ে আমরা তা করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।’

আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *