যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো শহর যেন এক টুকরো বাংলাদেশ

নিউইয়র্ক থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই শহরটার নাম বাফেলো। আমেরিকা-কানাডা সীমান্তে অবস্থিত বাফেলো নামের শহরটা। সেই শহরটি যেন আমেরিকার বুকে ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশ। ছবির মতো সাজানো গোছানো কিছু ছিল না কখনও। এই শহরে বছর বিশেক আগেও বাঙালিদের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বর্তমানে এ শহরে বাংলাদেশীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নাগরিক জীবনে বেড়েছে গতিশীলতা। এর ফলে ট্রাফিক জ্যাম, বসবাস অতিরিক্ত মানুষ এবং অতিরিক্ত বাড়ি ভাড়া অভিবাসী বাঙালিদের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে বিষন্ন। নাগরিক কোলাহল ছেড়ে মানুষ এখন নিউইয়র্ক থেকে আশপাশের এলাকায় পরিবার নিয়ে স্থানান্তর হওয়া শুরু করেছে।

অভিবাসী বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিউইয়র্কের প্রতিদিনের নাগরিক কোলাহল থেকে বাঁচতে অনেকেই নীরবতার শহর বাফালোকে বেছে নিয়েছে। বর্তমানে এ শহরে বাংলাদেশীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশী কমিউনিটি এখানে খুব শক্তিশালী অবস্থানে।

আরও পড়ুন:  শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে বাংলাওয়াশের অপেক্ষায় টাইগাররা

বাফেলো শহরে এখন বাঙালিদের নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অত্যধিক,অনেক বাংলাদেশীরই একাধিক বাড়ি আছে এখানে।

হালাল মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ড্রাইভিং স্কুল থেকে শুরু করে বাঙালিদের রিয়েল এস্টেট বিজনেস, ফার্মেসি, সেলুন সবকিছুই আছে এখানে। বাংলাদেশী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্যে আছে বাঙালি স্কুল। ধর্মীয় শিক্ষার জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটা মাদ্রাসাও। এখানকার বাঙালিরাই প্রতিষ্ঠা করেছে এসব মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো। আছে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারও। বাফেলো শহরে এখন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাস করেন।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও বাফেলো দারুণ উন্নতি করছে, নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা এখন বাফেলোতে। বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়েও বাঙালি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। এর বিশাল ক্যাম্পাস আর নান্দনিক সৌন্দর্য এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন:  বিকেলে শপথ নেবেন নতুন উপদেষ্টারা

বাফেলো শহরের অনেক বাড়ির মালিকই এখন বাংলাদেশীরা। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাতেও বাঙালিদের আধিপত্য। জমি কেনা-বেচা, বাড়ি বেচা-কেনা কিংবা বাড়ি ভাড়া দেয়ার মতো বিষয়গুলোতে নেতৃস্থানীয় মানুষজনের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশী। এমনকি অন্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশীরা এই শহরে বসবাসের জন্যে আসতে চাইলে তাদের কাছে কিস্তিতে বাড়ি বিক্রি করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

মাত্র পাঁচ-দশ হাজার ডলার ডাউন পেমেন্ট দিয়েই এখানে বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ আছে। বাংলাদেশি গ্রোসারি স্টোরগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আসা মাছসহ অন্যান্য সামগ্রী। বাংলাদেশ থেকে এখন মানুষজন নিউইয়র্ক নয়, বরং বাফেলোর উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ছেন।

বাংলাদেশীদের হাত ধরেই বাফেলো শহরটা আমূল বদলে গেছে। দুই দশক আগে বাফেলো ছিল সন্ত্রাসের নগরী, ভীত এক জনপদ। সেই জায়গাটা এখন কোলাহলে পরিপূর্ণ। রাস্তায় গাড়ি আর মানুষের ভীড়।

আরও পড়ুন:  তাহসানের নতুন বউ রোজা আহমেদের ভিডিও ভাইরাল

বেশিরভাগ দোকান আর খাবারের রেস্টুরেন্টেই কাজ করছেন বাংলাদেশীরা, ট্যাক্সি ভাড়া করতে গেলেও দেখবেন বাংলাদেশী কোন চালকই অপেক্ষা করছেন আপনার জন্যে। এই বাংলাদেশী প্রবাসীরাই শহরটাকে বদলে দিয়েছেন, বসবাসের উপযোগী করে তুলেছেন।

বিশাল আমেরিকার বুকে ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশ হয়ে জ্বলজ্বল করছে বাফেলো নামের এই শহরটা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে #কাজী ইফতেখারুল আলম,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *