সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রের

সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সুদহার অন্তত ১ শতাংশ বাড়ছে। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীরা সুদ কিছুটা বেশি পাবেন। জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোর সুদের হার পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। শিগগির এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১ জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের নতুন সুদহার কার্যকর হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার ৫ বছর ও ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হার (সর্বশেষ ছয় মাসের নিলামের ভিত্তিতে) অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। তবে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ ৫০ বেসিস পর্যন্ত প্রিমিয়াম যোগ হবে। এতে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কিছুটা বেশি সুদ পাওয়া যাবে।

নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য সঞ্চয়পত্রের সম্ভাব্য সুদহার নির্ধারণ করেছে সরকার।

সেই হিসাবে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এ কম বিনিয়োগকারীদের সুদহার দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর বেশি অঙ্কের  বিনিয়োগকারীদের সুদহার দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার রয়েছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন:  অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হচ্ছেন যারা

তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে সম্ভাব্য সুদহার ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার হচ্ছে ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদহার পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার হচ্ছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদহার পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে এ স্কিমে সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া তিন বছর মেয়াদি পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুদ পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগ সুদহার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন:  শেষ মুহূর্তের গোলে ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ড

অনুমোদিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) জুন মাসে জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের জন্য এবং ডিসেম্বর মাসে জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার, মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়নের সুদহার এবং প্রিমিয়াম নির্ধারণ করবে। তবে ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এ সংস্কারের আওতাবহির্ভুত থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থায়ী আমানতে সাধারণত ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে কোনো কোনো ব্যাংক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত স্থায়ী আমানতে সুদ দিচ্ছে। সেখান বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশের মধ্যে। আগে ব্যাংক আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে অনেক বেশি মুনাফা দেওয়া হতো। ব্যাংক আমানতের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে সামঞ্জস্য আনতেই সুদহার বাড়ানো হচ্ছে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত কয়েক বছর  সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে সরকার। আইএমএফও চেয়েছিল সঞ্চয়পত্রে সরকারকে প্রতিবছর যে সুদ গুনতে হয়, তা কমে আসুক। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে এখন আবারও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে সরকার।

আরও পড়ুন:  পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা নাহিদ

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঋণাত্মক ৭ হাজার ৩১০ কোটি নির্ধারণ করা হয়। তবে চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে এ খাত থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *