যেমন ছিল রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সাল

রাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ দুই পাহাড়ের মাঝে দিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে এগিয়ে যাওয়া উচুঁ-নিচু সড়ক একসময় গিয়ে থামে দেশের ৩৭ নাম্বার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। কাপ্তাইলেক ও আকাশের সাথে মিশে থাকা এই ৬৪ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় একহাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন। নিশ্বাসে মিশে থাকা প্রিয় ক্যাম্পাসের নাম রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(রাবিপ্রবি)।সুবিশাল পাহাড়ের মাঝে হঠাৎ করে দেখলে মনে হয়ত নাও হতে পারে এটাও একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু নাম ফলক, ব্যানার ও শিক্ষার্থীদের পদচারণা দেখলে একসময় ঠিকি মনে হবে এটাই প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া ৬৪ একরের বিশ্ববিদ্যালয়।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন তেমনভাবে না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আকৃতি রাবিপ্রবির গত দশ বছরে পাওয়ার কথা ছিল তা এখনো পাওয়া হয়নি। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে কল্পনা করা কঠিন।”শিক্ষা, সম্প্রীতি, প্রগতির” প্রতীক হয়ে রাবিপ্রবি পার করলো তার এক বছর। কেমন ছিল শেষ বছরের চাওয়া পাওয়া ও অর্জনের পরিসংখ্যান? সে উত্তরের অপেক্ষায় পুরো বছরের হিসেব নিকেশ করে দেখা যাক!

জানুয়ারি: বছরের প্রথম মাসে জাতীয় নির্বাচনের কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। জাতীয় নির্বাচনের পরেই ছাত্রলীগের তাণ্ডবে বহিরাগতদের আবাসিক হলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর হয় হল প্রশাসন।

আরও পড়ুন:  নারীদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয়, প্রতিকারে কী করবেন?

ফেব্রুয়ারি: পাহাড় ও সমতলের বৈচিত্র্যের সমন্বয় করতে রাবিপ্রবি ও ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভ্রমণ,চতুর্দশ জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াড-২০২৩ এর আঞ্চলিক পর্যায়ে রাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী এম. আকতারুজ্জামান অপুর (৭ম ব্যাচ) যৌথভাবে তৃতীয় স্থান অর্জন , হলে শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও রাবিপ্রবির প্রাণের বই মেলা এই মাসেই অনুষ্ঠিত হয়।

মার্চ: নারী দিবস,ইফতার মহফিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা ও বসন্ত পার করে এই মাসে।

এপ্রিল:বৈসাবি উৎসবে রাবিপ্রবির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ , গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর রাবিপ্রবি পরিদর্শন, নতুন প্রক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ ও বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার কার্যক্রমে এই মাস বেশ আলোচিত।

মে: সার্বজনীন পেনশন প্রজ্ঞাপন বাতিল, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ”বি ও সি” ইউনিটের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া ও ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে রাবিপ্রবির বন্ধ থাকার মতো ঘটনা এই মাসে ঘটে।

জুন : বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাবিপ্রবির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি, পরবর্তীতে কর্মবিরতিও পালন করেন তারা। এই মাস থেকে রাবিপ্রবির অচালবস্থা শুরু হয়।

আরও পড়ুন:  সরকারি প্রাথমিকে ৬৫৩১ শিক্ষক নিয়োগপত্র পাচ্ছেন আজ, যোগদান ১২ মার্চ

জুলাই: বিশ্ববিদ্যালয় দিবস স্থগিত, শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের লাগাতার কর্মবিরতি পালনে স্থবির হয়ে পরে রাবিপ্রবি। অন্যদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন দিন দিন আন্দোলনের রূপ নেয়।

আগস্ট: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার ও মৃতদের সঠিক তদন্তের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের বাঁধা, ৫ আগস্টের পরে তীব্র আন্দোলনের মুখে রাবিপ্রবির উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ পুরো বছরের আলোচিত ঘটনা।

সেপ্টেম্বর: গণঅভ্যুত্থানের মাসপূর্তিতে শহিদদের স্মরণে রাবিপ্রবিতে মিছিল,আট ধাপ উন্নতিতে ওয়েবমেট্রিকে রাবিপ্রবির অবস্থান,আঞ্চলিক সংঘাতে সচল হয়েও আবারো বন্ধ হয় রাবিপ্রবির একাডেমিক কার্যক্রম। সুস্মিতা মহাজনকে এই মাসেই হারায় রাবিপ্রবি পরিবার।

অক্টোবর: দুর্গাপূজার ছুটি, উপাচার্য বিহীন ৫০ দিন পার, রাবিপ্রবি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কোটার ভর্তির সাক্ষাৎকারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, রাবিপ্রবিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয় এই মাসেই।

নভেম্বর: রাবিপ্রবিতে নবীন কর্মচারীদের বরণ , সিএসই কম্পিউটার ক্লাবের আয়োজনে কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান , ম্যানেজমেন্ট দিবস পালন, ছাত্র হলের আয়োজনে ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহযোগিতায় শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ” ছাত্রদলের” “শিক্ষার্থীদের চোখে আগামীর ছাত্র রাজনীতি ও বাংলাদেশ” শীর্ষক মতবিনিময় সভা, ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজির উদ্যোগে বিশ্ব মাৎস্য দিবস পালন, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার গায়েবানা জানাজা সহ ব্যস্ত মাস ছিল নভেম্বর।

আরও পড়ুন:  শিশুর প্রস্রাবে সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়

ডিসেম্বর:কর্মচারী কল্যাণ সমিতির শপথ গ্রহণ, রাবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম বৃদ্ধি ও কমানো, আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস উদ্‌যাপন, শেখ মুজিবুরের ম্যুরাল উচ্ছেদ, বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সব বড় দিনের ছুটি ও শীত কালের অবকাশে রাবিপ্রবি এখন ।

বিদায়ী বছরে অবকাঠামোগত নতুন কোন উন্নয়ন হয়নি। অবিভাবহীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেড়েছে অপেক্ষার প্রহর। তবে নতুন বছরে রাবিপ্রবি নতুন ভাবে এগিয়ে যাবে এমনই প্রত্যাশা রাবিপ্রবিয়ানদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *