প্রতিপক্ষের কাছে বিজিবি সদস্যদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

সীমান্তবর্তী প্রতিপক্ষের কাছে কোনো অবস্থাতেই পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার ও কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্য  তিনি এ আহ্বান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,  আজ তোমরা যে তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেছ তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল তোমাদের কঠোর প্রশিক্ষণ, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও অদম্য আগ্রহের ফলে। মনে রাখবে, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরো বিস্তৃত হবে। তোমরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে তখন তোমাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার উপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় তোমরা প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দিবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, তোমরা আমাদেরকে হতাশ ও নিরাশ করবে না। জেনে রাখবে, তোমাদের দেয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে। তোমরাই হবে আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক।

আরও পড়ুন:  ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবে মেসি, বলছেন সুয়ারেজ

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সুপরিচিত এ বাহিনী বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা এবং সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করে আসছে।

তিনি বলেন, বিজিবির সকল সদস্য সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায়ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সমগ্র দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আমি এ বাহিনীর মহাপরিচালক থেকে শুরু করে সর্ব স্তরের সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, সেই সকল অকুতোভয় সদস্যদেরকে, যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ এই বাহিনীকে তাদের অসম সাহস ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গর্বিত করেছেন। এছাড়া এ বাহিনীর সদস্য হিসেবে ৮ জন ‘বীর উত্তম’ ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৮ জন বীর প্রতীক এবং ৮১৭ জন বীর শহীদের বীরত্বগাথায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মহিমান্বিত। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধা ঘুষ, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা: যুক্তরাষ্ট্র

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি,  চলতি বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আত্মদানকারী শহিদদের। গত জুলাই- আগস্ট মাসে সংঘঠিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যবৃন্দ ছাত্র জনতার দাবির সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তি ও পরিবারবর্গের সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, আহত ছাত্র জনতাকে নিজস্ব উদ্যোগে চিকিৎসা সেবা ও তাদের পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তা প্রদান বিজিবি’র সকল সদস্যকে জনমানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীকে পরিণত করেছে। বিজিবি’র এ মহতী উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

এ সময় অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন:  ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

১০২তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩০ জুলাই বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৬৯৫ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬৪৯ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে।

দীর্ঘ ২৩ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের সূচনা হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *