খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত ছয় ব্যাংক: অর্থনৈতিক সংকট গম্ভীর

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে উদারতা দেখিয়েছে। ঋণখেলাপের সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজড করে পুনঃতফসিল করা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর ফলে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ২০১৫-১৬ সালের পর ক্ষমতাসীন দলের লোকদের ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাংক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও খেলাপিদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যার ফলে কিছু ব্যাংক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে ব্যাংক খাতের মোট ঋণস্থিতি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত মার্চে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন:  ব্যাংক সচল রাখতে ইন্টারনেটের বিকল্প ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে, কারণ অনেক ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে এবং আদালতের স্থগিতাদেশের আওতায় রয়েছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যখন দেখা হবে, তখন তা আরও বেড়ে যাবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আট হাজার ২৫৬ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৬৪ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫২ শতাংশ।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৬ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৮৮ শতাংশ এবং পদ্মা ব্যাংকের ৮৫ শতাংশ। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে খেলাপি ঋণের হার ৯৬ শতাংশ, যা উদ্বেগজনক।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশ-চীন যৌথ ঘোষণায় যা আছে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ দুই হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত মার্চে এই পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫-১৬ সালের পর থেকে ঋণখেলাপিদের অনেক সুযোগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু এসব মডেল সুফল দেয়নি। ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স দুর্বল ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে এবং তাদের মেরামতের চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, “কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাক, আমরা তা চাই না। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকগুলো থেকে মানি সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে।”

এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে, নইলে ব্যাংক খাতের সংকট আরও গভীর হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *