সামাজিক মাধ্যম আসছে আয়করের আওতায়

সামাজিক মাধ্যমগুলোকে আয়করের আওতায় আনার উদ্যোগ বর্তমানে চলমান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইউটিউব, নেটফ্লিক্সের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পরিশোধ করলেও তারা এখনও আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতায় আসেনি।

২০২৩ সালে নতুন আয়কর আইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তবে এটি কার্যকর করার প্রক্রিয়া এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন হয়নি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহায়তায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়কর রিটার্ন দাখিল এবং আয়কর আদায় করতে চাইছে।

এই পদক্ষেপটি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে এবং সঠিকভাবে কর প্রদান করলে এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

আশা করা যায়, বিটিআরসি ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে এই পদক্ষেপটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে আয়কর প্রদান করবে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আয়করের পাশাপাশি ভ্যাট আদায়ের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর জন্য একটি বড় অর্জন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইউটিউব, এবং নেটফ্লিক্স বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসা করছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এনবিআর তাদের কাছ থেকে ১১৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ভ্যাট আদায় করেছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুন:  ঝুঁকিতে উপকূল : যেদিন আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’

তিন বছর আগে এনবিআর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসে। ২০২১ সাল থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দর-কষাকষির মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল, এবং এরপর থেকে প্রতি মাসে সেবা সরবরাহের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

এই পদক্ষেপগুলো দেশের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে তাদের কর প্রদান নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। এটি একটি বড় অর্জন হিসেবে ধরা যেতে পারে এবং সরকারের আর্থিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এই কোম্পানি সব মিলিয়ে সাড়ে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। বিজ্ঞাপন প্রচার করেই মূলত বেশি আয় করে ফেসবুক। ফেসবুকের তিনটি কোম্পানির মধ্যে ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। ফেসবুকের বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানÑ পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড নামমাত্র ভ্যাট দিয়েছে, যা পরিমাণে বিশ লাখ টাকার মতো।

আরও পড়ুন:  স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রোক্সিমা বেটা পিটিই লিমিটেড ৩৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক গুগল এশিয়া প্যাসিফিকের দেওয়া ভ্যাটের পরিমাণ ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক গুগল আয়ারল্যান্ড ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভিডিওস্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও প্রযোজনা সংস্থা নেটফ্লিক্স ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে। আমাজন ডটকম, অ্যামাজন অ্যাডভারটাইজিং ও অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস ৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার ভ্যাট পরিশোধ করেছে।

এ ছাড়া লিংকড-ইন সিঙ্গাপুর ১ কোটি ২৫ লাখ, জহো করপোরেশন ২৫ লাখ, জুম ভিডিও কমিউনিকেশন ১ কোটি ১৫ লাখ, মাইক্রোসফট রিজিওনাল সেলস ১ কোটি ৮৬ লাখ, তুরনি টিন ইন্ডিয়া প্রাইভেট ২৩ লাখ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১ কোটি ১০ হাজার, ড্রপবক্স ইন্টারন্যাশনাল ২৩ লাখ ও দ্য রকেট সাইন্স গ্রুপ ৭০ হাজার টাকা ভ্যাট দিয়েছে।

আরও পড়ুন:  ৯ শিল্প গ্রুপ মালিকের পাসপোর্ট স্থগিত হচ্ছে

গুগল, অ্যামাজন, ফেসবুকসহ অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো (যাদের এখানে স্থায়ী কার্যালয় নেই) এ দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নিজেদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব সেবা নিয়ে গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করেন। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখে।

 

…ডিডিজে নিউজ// মোহাম্মদ ফয়সাল আলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *