সন্দ্বীপে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া টানা দুই ঘণ্টার বজ্রপাত অনেকেরই মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে সত্তরোর্ধ্ব লালমিয়ার মতো প্রবীণদের। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত এই বজ্রপাত চলতে থাকে। লালমিয়া জানান, তাঁর জীবনে এতো দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র বজ্রপাত আগে কখনো দেখেননি।

তিনি বলেন, ‘একটানা এমন ঠাডা (বজ্রপাত) আই জীবনেও দেখি নাই। সেকেন্ডে সেকেন্ডে ঠাডা হইড়সে।’

দুপুরের পর থেকেই সন্দ্বীপের আবহাওয়া গুমট ছিল, আর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তুমুল বজ্রবৃষ্টি। এই সময় পথে-ঘাটে আটকে পড়া মানুষজন বজ্রপাত থামার অপেক্ষায় ছিলেন, কিন্তু তা যেন শেষ হচ্ছিল না। দুই ঘণ্টা তাণ্ডবের পর রাত পৌনে ৯টার দিকে বজ্রপাত কিছুটা কমে আসে।

আরও পড়ুন:  সারা দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা

বজ্রপাতের ঘটনায় প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলার সবুজ চর এলাকার চারণভূমিতে একটি মহিষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহিষের মালিক নিজাম উদ্দিন। আজ বুধবার সকালে গিয়ে তিনি মহিষটিকে মৃত অবস্থায় পান।

গতকাল সন্ধ্যা থেকে পুরো সন্দ্বীপ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উত্তর সন্দ্বীপের বেশ কিছু এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সন্দ্বীপের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসমাঈল।

সন্দ্বীপে গতকালের টানা দুই ঘণ্টার বজ্রপাতের তাণ্ডবে বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে। গাছুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গাছ চাপা পড়ে একটি বসতঘর ভেঙে গেছে, তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। গাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা জানান, দুর্ঘটনার সময় ঘরে কেউ ছিলেন না বলে প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো গেছে।

আরও পড়ুন:  যুক্তরাজ্য নির্বাচনে ঋষির ভরাডুবি, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন স্টারমার

সন্তোষপুরের হাজিরহাট এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, ১০-১৫ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে বজ্রপাতের ঘটনা অনেক বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক নুরুল করিম জানিয়েছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাতের মাত্রা বাড়ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল করিম বলেন, ‘কিছুটা ফানেলের মতো জায়গায় সন্দ্বীপের অবস্থান। বাতাসের প্রবাহের বিষয়টি বিবেচনায় আনলে তা মেঘের চলাচলেও প্রভাব ফেলতে পারে। বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও এটির কিছু প্রভাব পড়তে পারে।’

দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বজ্রপাতের তাণ্ডব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব হয়ে ওঠেন নেটিজেনরা। অনেকেই একে ‘নজিরবিহীন’ ও ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেছেন।

 

ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *