কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক 

মোরা একটি ফুলকে বাচাবো বলে যূদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরের একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। আজ একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবো। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকট সাধারণত যারা ভোগেন তারা আমাদেরই স্বজন, ভাই বোন। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগ সহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে।

এসময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত। আমাদের দেশে একসময় বেশিরভাগ রক্তই আসতো পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তারপর ও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যেই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের। এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কেনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে। আমাদের দেশে বছরে প্রায় সাড়ে ৫-৬ লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এ রক্তের অভাবে অনেকক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।

আরও পড়ুন:  রক্তদান অত্যন্ত সওয়াবের কাজ

কিডনী জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালিসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগেন ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারিরীক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকেন একব্যাগ রক্তের জন্য। যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে তখন প্রাণ ভরে তার জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত। ভালো কাজে মানুষ সবসময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছে দেখে তার আরো বন্ধুও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হয়। রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্যে তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন তার সামাজিক অঙ্গীকার। একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সে মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি তাকে কখনোই অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত উপকারী।

আরও পড়ুন:  পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা নাহিদ

রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার ২ সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।

ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদরোগ ও হার্ট এটাকের ঝুঁকিও অনেক কম। রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’ ঋগ্‌বেদে বলা হয়েছে ‘নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত

আরও পড়ুন:  প্যারিস অলিম্পিকস: বাছাইপর্বেই বাদ রবিউল

@dakdiyejai.news  @ডাকদিয়েযাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *