শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৯, নিখোঁজ দুই শতাধিক

শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ‘দিটওয়াহ’র প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় এখনো দুই শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি দেশটির অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় দিটওয়াহ গত শুক্রবার দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে এবং পরবর্তীতে সরে যায়। দেশটিতে বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে, তবে এই মাত্রার চরম বৈরী আবহাওয়া সেখানে বিরল ঘটনা। এর আগে দেশটিতে চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ২০০৩ সালের জুনে, যাতে ২৫৪ জন নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের তথ্যমতে, বন্যায় ২০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়া ১ লাখ ৮ হাজার মানুষকে সরকারি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:  তরুণদের জন্য দেড় কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি আ.লীগের

সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ক্যান্ডি ও বাদুলা জেলায়। সেখানকার অনেক এলাকা এখনো মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া কেলানি নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় কিছু এলাকায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানি সরবরাহহীন হয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

বাদুলা জেলার মাসপান্না গ্রামের বাসিন্দা সামান কুমারা নিউজ সেন্টার ওয়েবসাইটকে টেলিফোনে জানান, ‘আমরা আমাদের গ্রামের দুইজনকে হারিয়েছি… অন্যরা একটি মন্দির এবং এখনো দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্রাম ছেড়ে যেতে পারছি না এবং ভূমিধসের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় কেউ এখানে আসতেও পারছে না। এখানে কোনো খাবার নেই এবং বিশুদ্ধ পানিও ফুরিয়ে আসছে।’

আরও পড়ুন:  শান্ত-মুশফিকের রেকর্ড জুটিতে দাপুটে জয় বাংলাদেশের

পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার বিকেলে উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় জেলা কুরুনেগালায় একটি বৃদ্ধাশ্রম প্লাবিত হয়ে ১১ জন আবাসিক নিহত হয়েছেন।

এদিকে অনুরাধাপুরায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া একটি বাস থেকে ৬৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান শেষে ডব্লিউএম শান্তা নামের এক যাত্রী এএফপিকে বলেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের ছাদে উঠতে সাহায্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ভাগ্যবান ছিলাম… আমরা যখন ছাদে ছিলাম, তখন এর একটি অংশ ধসে পড়ে… তিনজন নারী পানিতে পড়ে গিয়েছিলেন, তবে তাদের পুনরায় ছাদে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।’

দুর্যোগ মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিদেশে অবস্থানরত শ্রীলঙ্কানদের প্রতি অর্থ অনুদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:  চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

শ্রীলঙ্কার এই দুর্যোগ এমন একসময়ে ঘটল যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডেও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখো মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *