‘যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে,তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশে একটি রাজনৈতিক দল যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে, জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।’ 

আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌন মিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এই কর্মসূচি হয়। সমাবেশ শেষে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শাহবাগ থেকে মৌন মিছিল করে নারীরা, যা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। 

সমাবেশে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় আরও বক্তব্য শিরীন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, সানজিদা ইসলাম তুলি, রেহানা আক্তার শিরীন প্রমুখ।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সারা বাংলাদেশে যে নারী নির্যাতন বর্তমানে হচ্ছে বা অতীতে হয়েছে তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। কিছু কিছু আইনপ্রণয়ন হয়, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন কঠিন হলে সঠিকভাবে কার্যকর হয় না।
তিনি আরও বলেন, আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে নারী নির্যাতনকারীরা ধর্ষকরা বেড়িয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্ত আইনের অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী করে থাকেন, সেদিকেও আমরা নজর দেব।

আরও পড়ুন:  ভাষণে জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা: সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, তারা চায় যেন এ দেশের নারীরা অন্ধরমহলে বন্দী থাকে, দেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে, যেন এই দেশে নারীর অগ্রগতি না হয়।

সালাহউদ্দিন বলেন, সেজন্য তারা বলছে, নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে কর্মসংস্থানের জন্য কোনো অসুবিধা না হয়। অথচ, দেখা যায়, সেই কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে, নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে। তারা তাদের কর্মস্থলে সম্মানের সঙ্গে চাকরি করবে এবং সঠিক কর্মসংস্থানের জন্য সময় অনুযায়ী কাজ করবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করবে। তাতে করে নারীর কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক। আমরা চাই, নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হোক। যদি কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়; তাহলে যারা অফিস আদালত, কলকারখানা পরিচালনা করেন; তারা নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। ফলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।

আরও পড়ুন:  ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে রোডম্যাপ দাবি সালাহউদ্দিনের

উপস্থিত নারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে জানতে চান আপনারা কী চান নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাক, তখন নারীরা সমস্বরে চিৎকার করে জবাব দেন ‘না’। যারা কর্মঘণ্টা কমানোর বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য খারাপ বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, তারা চায় নারীরা অন্ধরমহলে বন্দী থাকুক। সমাজের অগ্রগতি তারা চায় না। দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে গেলে বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেক পুরুষ-অর্ধেক নারী; তাদের সবার প্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পারিবারিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

শিক্ষা-দীক্ষায়, কর্মসংস্থানে, বাসস্থলসহ সমাজের সর্বত্র যাতে নারীরা নিরাপদ থাকে; সেজন্য আমরা আগামীতে ৩১ দফার ভিত্তিতে নারীদের জন্য সমোস্ত পরিকল্পনা করছি বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সেই হিসেবে বাংলাদেশ হবে অগ্রগতির চরম শিখরে উঠা একটি দেশ। সেখানে অংশগ্রহণ থাকবে নারী-পুরুষের সমান।

রাজশাহীর কাটাখালীতে ধানের শীষের প্রচার চালাতে গিয়ে দুই নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজশাহীতে আমাদের বোনদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। জুতা পেটা করছে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী, যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:  জাতিসংঘ সহিংসতা ও প্রাণহানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায়

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ বিরাজ করুক, যেখানে আমরা সবাই সমান। ধর্মের ভিত্তিতে এখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে জাতের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে ধর্ম-বর্ণ, সংস্কৃতি, ভাষাভাষী সবাই মিলে আমরা বাংলাদেশি। সুতরাং আমরা সবাই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান অধিকার ভোগ করব। এ জন্যই আমরা সংগ্রাম করেছি, আমরা রক্ত দিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *