প্রখ্যাত নির্মাতা-সাহিত্যিক শহীদ জহির রায়হান ও অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার ছেলে তপু রায়হান। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মা, অভিনেত্রী সুচন্দা। এসময় জীবনের দুঃসময়, দেশের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতি তুলে ধরেন অভিনেত্রী।

সুচন্দা বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আমার ছেলে, জহির রায়হানের ছেলে যেন মানুষের জন্য, দেশের জন্য, সবার জন্য কাজ করে-এটাই আমার কামনা। পরিবারের সবাই খুব খুশি। হয়তো আজ ওর বাবা (জহির রায়হান) বেঁচে থাকলে তিনিও খুশি হতেন। আমার ছেলে বলে বলছি না, মানুষের প্রতি তপুর ভীষণ ভালোবাসা।’

দেশ স্বাধীন করার আকাঙ্ক্ষার দিনগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য যখন মাঠে নেমেছিলাম, তখন পায়ে জুতা ছিল কি-না, তা খেয়াল করিনি। লক্ষ্য ছিল-একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ব। তখন সংসদ কী, রাষ্ট্রপতি কে- এগুলো আমরা বুঝতাম না। জানতাম শুধু দেশ আর দেশের মানুষ। এই দুটো বিষয় সামনে নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি।’

আরও পড়ুন:  ভারতের বিরুদ্ধে রেকর্ড পরাজয়, হতাশ বাংলাদেশ

জহির রায়হানের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে সুচন্দা বলেন, ‘জহির রায়হান রাজনীতি করতেন না, তবে রাজনীতি লালন করতেন সবসময়। তার লেখনী ও চলচ্চিত্রে সবসময় দেশ ও মানুষের কথা থাকত। আমি তার কাছাকাছি থেকে দেখেছি, তিনি সব সময় নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কাজ করতেন।’

জহির রায়হানের নিখোঁজের পর পরিবারের যে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে সুচন্দাদের। সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর এমনও সময় গেছে, অভাবে গাছের পাতা খেয়েছি। কারণ, তখন প্রায়ই খাবার জুটত না। তারপরও হাল ছাড়িনি। সন্তানদের মানুষ করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, তারা তাদের বাবার মতো মানবিক ও দেশপ্রেমিক হবে। রাজনীতি না করলেও রাজনৈতিক আদর্শ লালন করে মানুষের জন্য কাজ করবে।’

আরও পড়ুন:  নির্বাচনে ৮০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুচন্দার কথায়, ‘আমাদের ছোট ছেলে তপু রায়হান কখনো বাবাকে দেখেনি। কিন্তু তার মধ্যে জহির রায়হানের প্রতিচ্ছবি দেখি। সুযোগ পেলেই মানুষের জন্য ছুটে যায়। তাই ঢাকা-১৭ আসনে তার নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে আমি খুশি। হার-জিত থাকবেই, তবে আমার বিশ্বাস সে মানুষের সমর্থন পাবে।’

ঢাকা-১৭ আসনের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, শাহজাদপুর, ভাসানটেক ও মহাখালী এলাকার সমস্যাগুলো আমি জানি। কোথায় কী ধরনের উন্নয়ন বা সংস্কার প্রয়োজন, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা আছে। দীর্ঘদিন ধরে কিছু সামাজিক উদ্যোগে কাজ করেছি। দেখেছি, সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো প্রায় একই রকম। বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের মানুষের সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ নির্ধারণ করতে পারলে সেটি দেশের জন্য কার্যকর একটি মডেল হতে পারে।’

আরও পড়ুন:  মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠক

এদিকে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তপু রায়হান। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজের ইশতেহারকে ‘ঐকমত্যের ইশতেহার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রথাগত রাজনীতি করতে আসিনি। বরং সহযোগিতার রাজনীতি চালু করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা জহির রায়হান রাজনৈতিক সচেতন হলেও কোনো দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন না। বাবার মানবতাবাদী সমাজের স্বপ্ন ধারণ করে আমি বিশ্বাস করি—সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও মানবকল্যাণে রাজনীতি করা সম্ভব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *