বছরের সবচেয়ে বড় সুপারমুন দেখা যাবে আগামীকাল

চলতি বছরের এ সপ্তাহে রাতের আকাশে দেখা যাবে সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল চাঁদ বা সুপারমুন। ২০২৫ সালে তিনটি পরপর সুপারমুনের মধ্যে দ্বিতীয়টি দেখা যাবে এই বুধবার (৫ নভেম্বর) বা ব্রিটিশ উৎসব ‘বনফায়ার নাইটের’ দিন।

এদিন একদিকে আকাশে বড় ও উজ্জ্বল সুপারমুন ঝলমল করবে ও অন্যদিকে ইউরোপবাসী উদযাপন করবে বনফায়ার নাইট। ফলে রাতটি আলো আর রঙের দারুণ মেলবন্ধন হবে। সোমবার (৩ নভেম্বর) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

চাঁদ যখন নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে, সেই সময় পূর্ণিমা হয়। আর ওইসময় চাঁদ সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক বড় আর ঝলমলে দেখায়। ফলে এ সপ্তাহের রাতগুলো হবে একটু বেশি আলো ঝলমলে ও মোহনীয়।

এ প্রাকৃতিক দৃশ্যটি দেখতে চাইলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ওপর নজর রাখতে হবে পৃথিবীবাসীকে। কারণ, কোথায় আকাশ সবচেয়ে পরিষ্কার থাকবে তা জানা গেলেই চাঁদ দেখার জন্য সেরা জায়গা বেছে নিতে সুবিধা হবে।

আরও পড়ুন:  জুনে আইএমএফের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ

এই চাঁদকে কেন ‘সুপারমুন’ বলা হয়?

চাঁদ পৃথিবীকে একদম বৃত্তাকার পথে আবর্তন করে না। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা ডিম্বাকৃতি বা উপবৃত্তাকার। ফলে চাঁদ সবসময় পৃথিবী থেকে সমান দূরত্বে থাকে না, কখনো একটু কাছে আসে, আবার কখনো একটু দূরে চলে যায়।

চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে তখন সেই অবস্থাকে বলে ‘পেরিজি’। এ সময় পৃথিবী থেকে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মাইল দূরে থাকে চাঁদ। আর পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরে চলে যাওয়ার অবস্থাকে বলে ‘অ্যাপোজি’। এ সময় দূরত্ব হয় প্রায় দুই লাখ ৫০হাজার মাইল।

চাঁদ যদি পূর্ণিমার সময় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে বা পেরিজির ৯০ শতাংশ কাছাকাছি থাকে তাকে বলে ‘সুপারমুন’। এ সময় আকাশে চাঁদ সাধারণ পূর্ণিমার চেয়ে বড় ও উজ্জ্বল দেখায়।

১৯৭৯ সালে ‘সুপারমুন’ শব্দটি প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেন জ্যোতিষী রিচার্ড নোল। তিনি এমন এক পূর্ণিমাকে বোঝাতে এই নামটি দিয়েছিলেন, যা চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে তখন দেখা যায়। ফলে তা সাধারণ পূর্ণিমার চেয়ে বড় ও উজ্জ্বল হয়।

আরও পড়ুন:  ৭ অক্টোবর বছরের প্রথম সুপারমুন, দেখা যাবে বাংলাদেশেও

সাধারণ পূর্ণিমার তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বড় ও ৩০ শতাংশেরও বেশি উজ্জ্বল দেখাতে পারে সুপারমুন।

নভেম্বরের এই সুপারমুনকে ‘বিভার মুন’ও বলা হচ্ছে, যা হবে এ বছরের পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসা পূর্ণিমা। ফলে এ সময় চাঁদকে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও আকাশে সবচেয়ে বড় দেখাবে। উত্তর গোলার্ধের বড় আকারের আধা-জলচর প্রাণী হচ্ছে বিভার।

কেন এটিকে ‘বিভার মুন’ বলা হয়?

প্রকৃতি ও আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিটি মাসের পূর্ণিমারই নামকরণ করেন বিজ্ঞানীরা। এসব নামের অনেকটি শতাব্দী আগ থেকে চলে আসছে। কিছু নাম সহজে বোঝা যায়, যেমন ফেব্রুয়ারির ‘স্নো মুন’ বা জুনের ‘স্ট্রবেরি মুন’। আবার কিছু নাম বোঝা তুলনামূলকভাবে কঠিন।

নভেম্বরের পূর্ণিমাকে ‘বিভার মুন’ বলার কারণ হচ্ছে, এ নামটি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত হত। কিছু আদিবাসী আমেরিকান গোত্র থেকে শুরু করে প্রাথমিক ইউরোপীয় বসবাসকারীদের মধ্যেও এ নামের চল রয়েছে।

আরও পড়ুন:  পদত্যাগ করলেন পাপন

নভেম্বরের এ সময়ে বিভাররা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। নিজেদের বাঁধ তৈরি ও শীতের জন্য খাদ্য সংরক্ষণ করে তারা। ফলে এই পূর্ণিমার সঙ্গে তাদের কার্যকলাপ মিলিয়ে এ নামটি এসেছে।

১৬শ শতকে যুক্তরাজ্যে বিভার শিকার করা হত তাদের চামড়া পাওয়ার জন্য। এদের এত বেশি শিকার করা হয়েছে, যে কারণে দেশটিতে বিলুপ্ত হয়ে যায় এসব প্রাণী।

নভেম্বরের পূর্ণিমা ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল পূর্ণিমা হলেও পরবর্তী পূর্ণিমার জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না আমাদের। এ বছরের তৃতীয় ও শেষ সুপারমুন দেখা যাবে ৪ ডিসেম্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *