বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের অর্ধেকেরও বেশি অংশ দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর ৫৪ শতাংশ বরাদ্দে দুর্নীতি হয়েছে। প্রাক্কলিত এই পরিমাণ প্রায় ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২ হাজার ১১০ কোটি টাকার বেশি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
টিআইবি জানায়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার—প্রয়োজনের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রতিবছর গড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হারে কমেছে, বিপরীতে আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। তবু বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অতি সীমিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতা নিয়মিত ঘটনা। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে—গড়ে ৬৪৮ দিনের প্রকল্প শেষ হতে লেগেছে ১ হাজার ৫১৫ দিন, অর্থাৎ ১৩৩ শতাংশ সময় বৃদ্ধি। কোনো কোনো চার বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষ হতে লেগেছে ১৪ বছর পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক তহবিলেও একই চিত্র—৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির মেয়াদ গড়ে ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার—যা একেবারেই নগণ্য।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশই দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অর্থ লুটপাট করেছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। জবাবদিহিতা, সুশাসন ও দক্ষতার অভাবের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এর পরিবর্তন চাই।
ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, জলবায়ু অর্থায়নে প্রকৃত উপকারভোগীদের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।







