১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম ইপিজেডের আগুন

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় কারখানার আগুন দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন তলার ছাদ ধসে পড়ছে।

দুর্ঘটনার কারণ জানতে ফায়ার সার্ভিস ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা ১০ মিনিটে ভবনটিতে আগুন লাগে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আগুন লাগার সাথে সাথে দ্রুত সবাইকে বের করে আনতে পেরেছেন তারা। এটা খুব স্বস্তির এক খবর। তিনি জানান, ভবনটি বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতো। চারটি ফ্লোরে গুদাম ছিল। ডাক্তারদের গাউন তৈরি হতো। দাহ্য পদার্থ পুড়তে সময় লেগেছে। ভবনটি দুইদিকে খোলা। পাশের ভবন ছিল খুবই কাছে। তাই আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। ভবনটি কোড মেনে করা হয়নি৷ তাই ফায়ার ফাইটাররা সময়মত পৌঁছাতে পারেননি। আগুনে অন্য একটি ভবনের এক চতুর্থাংশ ক্ষতি হয়েছে। তবে আমাদের চেষ্টার কারণে এই আগুন অন্য ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি। ১৭ ঘণ্টা একটা টিম হিসেবে কাজ করেছি আমরা।

আরও পড়ুন:  গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ,জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি

দ্রুত ইপিজেডের সব ভবন কমপ্লায়েন্স ভবনে রূপান্তর করে কার্যকারিতা সনদ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু কারখানা মালিকের নয়, দেশের জন্য ক্ষতি। এ ধরনের ক্ষতি চাই না। সিজন খারাপ। দ্রুত আগুন লেগে যাবে। সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।

ভবনটির কলাম, কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ভবনে কেউ যেন না ঢোকে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভবনের সামনে ব্যানার দিতে অনুরোধ জানিয়েছি। সার্ভে করার পর ভবনটি অপসারণ করা হবে কি-না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আগুন লাগার পর এলাকাটি কর্ডন করা এবং শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে আসা আমাদের প্রথম কাজ। ইনজুরি ও ক্যাজুয়ালিটি ছাড়া শ্রমিকদের বের আনা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর আগে ফায়ার কমপ্লায়েন্স সনদ নিতে হয়। এ ভবনও কমপ্লায়েন্সের আওতায় ছিল। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের ফায়ার ড্রিল (মহড়া) করানো হয়। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ফায়ার কনসালটেন্টের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

আরও পড়ুন:  বেইলি রোডে আগুন নিয়ন্ত্রণে, ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার

অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিক্যাল কোম্পানির গুদামে আগুন লাগে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে। অ্যাডামস তোয়ালে, ক্যাপ এবং জিহং মেডিক্যাল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা। কারখানা ভবনটি সাততলা। দুটি কারখানার গুদামই সাততলায়, যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ব্যবহার করা হয় ফায়ার সার্ভিসের রোবটিক ইকুইপমেন্টও। অতি দাহ্য পদার্থ থাকায় বেগ পেতে হয় ফায়ার ফাইটারদের। রাতে ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহায়ক হয় বৃষ্টি। সকাল সাড়ে সাতটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে পুরোপুরি আগুন নেভাতে আরও সময় লাগবে। এখনও কাজ করছে ১৭টি ইউনিট।

এই দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি এখনও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *