ইতালির লাম্পেদুসায় তিন দিনে বাংলাদেশিসহ ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী

মাত্র তিন দিনে দশটি নৌকায় চেপে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ লাম্পেদুসায় অন্তত ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছেছেন। এই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে দুই অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ। গত সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইতালিতে পৌঁছান বলে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে।

সোমবার রাতে আট মিটার দীর্ঘ একটি নৌকা থেকে ৪৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে ইতালির ফিন্যান্সিয়াল গার্ড। ওই নৌকা থেকেই দু’জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৌকাটিতে মিসরীয়, ইরিত্রিয়ান, ইথিওপিয়ান, গাম্বিয়ান এবং আলজেরিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ছিলেন।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে তিনজন হাইড্রোকার্বন জনিত বিষক্রিয়ায় ভুগছিলেন; তাদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর মরদেহ দু’টি কালা পিসানা সিমেট্রির মর্গে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানেই ময়না তদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এই দুই অভিবাসনপ্রত্যাশীও হাইড্রোকার্বন জনিত বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  ২০২৪ সালে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু: জাতিসংঘ

মঙ্গলবার রাতের লাম্পেদুসায় আসে আরও অন্তত পাঁচটি নৌকা। সবমিলিয়ে সেখানে অন্তত ৩০০ জন অভিবাসী ছিলেন। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মিসর, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া এবং সুদানের নাগরিক। তাদের মধ্যে একজন কয়েক মাস বয়সী শিশু ও একজন সন্তানসম্ভবা নারীও ছিলেন।

অভিবাসীরা বলেছেন, তারা লিবিয়ার আবু কামাশ থেকে যাত্রা করেছেন। ওই দিন রাতে ইতালির ফিন্যান্সিয়াল গার্ড পাঁচ মিটার দীর্ঘ একটি নৌকা থেকে ১৫ জন ইরিত্রিয়ান, সুদানিজ এবং আইভোরিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীকেও উদ্ধার করেন।

নৌকায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বলেছেন, তারা তিউনিশিয়ার এল ওলগা থেকে যাত্রা করেন। যাত্রার জন্য তাদের প্রত্যেককে এক হাজার ২০০ ইউরো করে অর্থ দিতে হয়েছিল। এই ১৫ জনের মধ্যে দু’জনকেও লাম্পেদুসার একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কারণ তারাও হাইড্রোকার্বন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এছাড়া, আরও দুটি নৌকায় ১০৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী লাম্পেদুসায় পৌঁছেছেন। তার মধ্যে একটি নৌকা সরাসরি কালা উচেলোতে পৌঁছায়। ওই নৌকাটিতে তিন অপ্রাপ্তবয়স্কসহ মোট ৬৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা বাংলাদেশ, মিসর ও সোমালিয়ার নাগরিক। লিবিয়ার হোমস থেকে যাত্রা করেছিলেন তারা।

আরও পড়ুন:  আইএমএফের বাংলাদেশকে ৩ বিষয়ে পরামর্শ

অপর নৌকাটিতে ৩৭ জন আফগান, বাংলাদেশি, মিসরীয়, ইরিত্রিয়ান এবং পাকিস্তানি ছিলেন। বুধবার সমুদ্রের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও দু’টি নৌকা থেকে মোট ৭৪ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। যাদের মধ্যে একজন শিশু এবং একজন সন্তানসম্ভবা নারী ছিলেন।

রাবারের একটি নৌকায় ছিলেন ২২ জন ইরিত্রিয়ান। অপর নৌকাটিতে ছিলেন ৫২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। তারা সবাই মিসরীয়, সুদানিজ, বাংলাদেশি এবং সিরিয়ান নাগরিক।

গত শনিবার ও রোববারও ৮৪৭ জন অভিবাসী ১৫টি নৌকায় লাম্পেদুসায় পৌঁছান। সবমিলিয়ে দ্বীপটির একমাত্র অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্রে বর্তমানে অভিবাসীর সংখ্যা হয়েছে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি। যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এদিকে, সমুদ্রের আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় অভিবাসীদের সিসিলিতে স্থানান্তর প্রক্রিয়াও চলছে ধীর গতিতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৩০০ অভিবাসীকে পোর্তো এমপেডোকলে স্থানান্তরের পর হটস্পটে এখনও এক হাজার ৪২০ জন অভিবাসী আছেন। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *