সকালে যে ৩ ধরনের ব্যায়াম করলে পেট থাকবে গ্যাসমুক্ত

ঘুম ভাঙার পরই মনে হয় পেট ভার হয়ে আছে। চোঁয়া ঢেকুর আর দিনভর অস্বস্তি—আধুনিক জীবনযাত্রায় গ্যাস-অম্বলের এই সমস্যা অনেকেরই। অ্যান্টাসিড বা গ্যাসের ওষুধ সাময়িক স্বস্তি দিলেও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ দেখাতে পারে যোগাভ্যাস। রাসায়নিকের ওপর নির্ভর না করে প্রকৃতির নিয়মেই শরীরকে সুস্থ রাখার এই প্রাচীন পদ্ধতি আজও সমানভাবে কার্যকর।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন সকালে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় বের করে কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন অভ্যাস করলেই হজমশক্তিকে যেমন শক্তিশালী করা যায়, তেমনই মুক্তি মেলে গ্যাসের কষ্ট থেকে। কী সেসব যোগাভ্যাস, জেনে নিন—

পবনমুক্তাসন

নামেই এর গুণের পরিচয়। ‘পবন’ অর্থাৎ বায়ু বা গ্যাসকে শরীর থেকে মুক্তি দেওয়াই এই আসনের প্রধান কাজ। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের সমস্যায় এটি অব্যর্থ।

কিভাবে করবেন

চিত হয়ে সোজা শুয়ে পড়ুন। দুই পা জোড়া রেখে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন। দুই হাতের আঙুল দিয়ে হাঁটু জড়িয়ে ধরে ঊরু দিয়ে পেটে আলতো চাপ দিন। মাথা মাটি থেকে সামান্য তুলে থুতনি বা নাক হাঁটুতে স্পর্শ করানোর চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন:  মুরগির চেয়ে মরিচ-বেগুনের দাম বেশি
এই অবস্থায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকুন। এরপর শ্বাস নিতে নিতে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।একইভাবে বাঁ পা দিয়ে অভ্যাস করুন। সবশেষে দুই পা একসঙ্গে ভাঁজ করে একই প্রক্রিয়াটি আবার করুন। প্রতি পায়ে  ৩বার এবং দুই পায়ে একসঙ্গে ৩বার অভ্যাস করা উচিত।

উপকারিতা : এই আসন সরাসরি পেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে অন্ত্রে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় গ্যাস বের হয়ে যায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে।

বালাসন

শিশুরা যেভাবে পেটের ওপর ভর দিয়ে ঘুমায়, সেই ভঙ্গিটিই হলো বালাসন। এটি কেবল পেটের সমস্যাই কমায় না, মনকে শান্ত করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।

কিভাবে করবেন

হাঁটু গেড়ে গোড়ালির ওপর বসুন, যাকে বজ্রাসন বলা হয়। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শরীরকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন। কপাল মাটিতে স্পর্শ করুন এবং পেটকে রাখুন দুই ঊরুর ওপর। হাত দুটিকে হয় শরীরের দুইপাশে রাখুন অথবা সামনের দিকে প্রসারিত করে দিন। চোখ বন্ধ করে এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে থাকুন।

আরও পড়ুন:  মাহে রমজানে দানের হাত বাড়িয়ে দিন

উপকারিতা : এই আসনে পেটে মৃদু চাপ পড়ে, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। এ ছাড়া এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা গ্যাস-অম্বলের অন্যতম পরোক্ষ কারণ।

অর্ধ মৎস্যেন্দ্রাসন

মেরুদণ্ডকে মোচড় দেওয়ার এই আসনটি পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ম্যাসাজ করার মতো কাজ করে। এর ফলে পাচনতন্ত্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

কিভাবে করবেন

পা সামনের দিকে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এবার ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে গোড়ালিটা নিতম্বের নিচে বাঁ দিকে রাখুন। বাঁ পা-টিকে ডান হাঁটুর ওপর দিয়ে পার করে পায়ের পাতা মাটিতে রাখুন। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের হাঁটু জড়িয়ে ধরুন এবং বাঁ হাতটি শরীরের পেছনে মাটিতে রাখুন।

শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে শরীরের ওপরের অংশ বাঁ দিকে ঘোরান। মাথাও বাঁ কাঁধের দিকে ঘোরান। এই অবস্থায় ২০-৩০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে উল্টোদিকেও আসনটি করুন।

আরও পড়ুন:  বিডিআর হত্যাকাণ্ড: আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন

উপকারিতা : এই আসনটি লিভার, কিডনি ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

সুতরাং প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এই তিনটি আসনকে সঙ্গী করুন। দেখবেন, ওষুধ ছাড়াই আপনার হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং সারা দিন কাটবে ফুরফুরে মেজাজে।

সূত্র : আজকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *