এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম: আবিদুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যখন ভোটকেন্দ্রগুলোতে ফল ঘোষণা চলছিল তখন তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বার্তায় আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন।

এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।’

গতকাল ডাকসু নির্বাচনে ভোট চলার সময়ই নির্বাচন নিয়ে কারচুপির অভিযোগ আনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্যের কাছে এসে এই মৌখিক অভিযোগ করে।

সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আবিদুল ইসলাম খান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘যদি ভোটগণনা ম্যানিপুলেশনের (কারচুপি) বিন্দু পরিমাণ চেষ্টা করা হয়, নির্বাচনের ফল ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করবে।’

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফলাফল প্রতিফলিত হলে বাংলাদেশপন্থীদের ভূমিধস বিজয় অবশ্যই হবে বলেও তখন মন্তব্য করেন ছাত্রদল সমর্থিত এই ভিপি প্রার্থী।

আরও পড়ুন:  আরব আমিরাতের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখুন

দিনভর যত অভিযোগ ছাত্রদলের

নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে জানিয়ে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনের সংবাদ সম্মেলনে আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোকেয়া হলের এক নারী শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে অভিযোগ করেছে, তাদের যে ব্যালট দেওয়া হয়েছে, সেখানে আগে থেকে সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদের (ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি ও জিএস প্রার্থী) নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল। অমর একুশে হলেও এমন ঘটেছে।

যেহেতু দুই জায়গায় ঘটনা ঘটেছে এবং প্রমাণিত হয়েছে, তার মানে আগেও অনেক ব্যালটে সম্ভবত আগে থেকে ক্রস দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে।’

প্রতিটি কেন্দ্রে ছাত্রদলকে বাধা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপি করার পরে উল্টো দায় দেওয়ার চেষ্টা করলেন আমাদের। প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আমি দেখেছি, জামায়াতের অনেক নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ সারা দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর আমাদের পোলিং এজেন্ট দিতে গিয়ে আপনারা প্রতারণা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ১২টি অভিযোগ জমা দিয়েছি। সব কিছু মিলিয়ে আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন রাখব না। অভিযোগ আসতে থাকলে তো আর মুখ বন্ধ করে থাকা যায় না।’

আরও পড়ুন:  ডাকসুর ২৮ পদে কারা কোনটিতে জয়ী

এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি অভিযোগ তোলা হয়। নির্বাচনে কারচুপি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি প্রবেশপথে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের জামায়াতসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলে ছাত্রদল। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি প্রবেশপথে দুপুরের পর থেকে ব্যাপক হারে জড়ো হয়েছে। এই নির্বাচন তো জামায়াত-শিবিরের নয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু তাদের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এটা জামায়াতের নির্বাচন। প্রশাসন এতটা নতজানু, তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ধিক্কার জানাই, যেকোনো সময় এখানে সংঘর্ষ হতে পারে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা চাই।’

ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, ‘আমরা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বলছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের পুরোপুরি জামায়াতীকরণ হয়েছে।’

এর আগে ভোট চলাকালে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে এস এম হলের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে আমরা কারচুপির অভিযোগ পেয়েছি। আমি নিজেও অমর একুশে হলের কেন্দ্রে গিয়েছি, প্রমাণ পেয়েছি। তাদের সঙ্গে খুব পোলাইটলি (নম্রভাবে) কথা বলেছি। তারাও বলেছে, হ্যাঁ, একটা ঘটনা ঘটে গেছে। রোকেয়া হলেও একই অবস্থা। তারাও বলছে, ঘটনা ঘটে গেছে।’

আরও পড়ুন:  ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পেছনে যে কারণ

সকাল থেকে পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ছাত্রদল সমর্থিত এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্যানেল শিট দিতে গিয়ে তাদের বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে। শুধু প্যানেলের কোড নম্বর বিতরণ করার কারণে রোকেয়া হলের পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থীকে ছাত্রত্ব শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন একজন শিক্ষক। অথচ তিনি শিবিরেরটা বিলি করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে এবং এই বিষয়ে তারা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন বলেও তখন জানান আবিদুল ইসলাম খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *